শেষ পাতা

প্যারিস ধাঁচেই জঙ্গি হানা জাকার্তায়

jongi hanaসংলাপ ॥ গাড়ির আড়াল থেকে চলছে গুলির লড়াই। রাস্তায় পড়ে ছিন্নভিন্ন দেহ। মুম্বইয়ের লিওপোল্ড কাফে থেকে প্যারিসের বেল ইকিপ পানশালা। আর এ বার সেই তালিকায় জুড়ল জাকার্তার স্টারবাকসের নাম! ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী শহর জাকার্তায় হামলা চালাল ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিরা। শহরের সবচেয়ে সুরক্ষিত এবং গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় চলল দিনভর আত্মঘাতী হামলা, ধারাবাহিক বিস্ফোরণ, লাগাতার গুলির লড়াই। আর এই জঙ্গি হানা জনমানসে উস্কে দিল আইফেল টাওয়ারে আলো নেভার স্মৃতি।

গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৪৯ মিনিট। আত্মঘাতী বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে জাকার্তার গুরুত্বপূর্ণ  এবং জনবহুল তামরিন স্ট্রিট। নিশানায় মার্কিন কফিশপ স্টারবাকস। এই তামরিন স্ট্রিটের ঘটনাস্তুল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে রয়েছে প্রেসিডেন্টের বাসভবন, মার্কিন দূতাবাস। আর হামলার লক্ষ্য মার্কিন এই কফিশপের পিছনেই রয়েছে একটি সিনেমা হল। পাশেই সারিনা শপিং মল, হোটেল, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক। এই রাস্তাতেই রয়েছে জাতিসংঘের দফতর। ‘হাই প্রোফাইল’ এই রাস্তায় বিস্ফোরণের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ময়দানে নামে জাকার্তার পুলিশ। ঘিরে ফেলা হয় পথ। খালি করে দেয়া হয় আশপাশের বহুতলগুলো। প্রকাশ্য রাস্তায় শুরু হয় জঙ্গি-পুলিশ গুলির লড়াই। তারই মধ্যে কফিশপ লাগোয়া সারিনা শপিং মলের সামনে দ্বিতীয় বিস্ফোরণে উড়ে যায় পুলিশ কিয়স্ক। টানা ছ’ঘন্টা লড়াইয়ের পরে পুলিশ জানায়, অভিযান শেষ হয়েছে। জাকার্তা পুলিশের মুখপাত্র মহম্মদ ইকবাল জানান, স্টারবাকস সংলগ্ন এলাকায় অন্তত ছ’টি বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে জঙ্গিরা। নিহতের সংখ্যা সাত। তিন আত্মঘাতী জঙ্গি-সহ খতম পাঁচ জঙ্গি। একটি সূত্র আবার বলছে, গ্রেফতার হয়েছে আরও দুই জঙ্গি। হামলা চালিয়ে শহরের পশ্চিমে পালিয়ে গিয়েছে দুই সন্দেহভাজন। সেই সঙ্গে নিহত হয়েছেন দুই সাধারণ মানুষ। এক জন ইন্দোনেশিয়ার বাসিন্দা, অন্য জন কানাডার। একাধিক পুলিশকর্মী-সহ আহত ২০। এই হামলার পরে মার্কিন কফিশপের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে আপাতত জাকার্তার প্রতিটি বিপণি বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।

জঙ্গি হানার খবর পেয়েই জাকার্তায় ফিরে আসেন জাভা সফররত ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো। ডাকা হয় জরুরি বৈঠক। দেশবাসীকে তাঁর আশ্বাস, আশঙ্কার মেঘ কেটেছে, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। জাকার্তার এই হামলায় নিহতদের প্রতি শোকপ্রকাশ করে টুইট করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।parish dhach

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, প্যারিস হামলার পর পরেই জাকার্তায় বড় ধরনের জঙ্গি-হামলার সতর্কবার্তা ছিল। আইএসের হুমকি-বার্তা বলেছিল, ‘এ বার কনসার্ট হবে জাকার্তায়’। সেই হুমকির কথা মাথায় রেখেই এই হামলায় আইএসের হাত রয়েছে বলে জানিয়ে দেয় পুলিশ। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই অবশ্য আইএসের সঙ্গে যুক্ত ‘আমাক’ নামে একটি সংবাদ সংস্থার মাধ্যমে দায় স্বীকার করে জঙ্গিগোষ্ঠী। জঙ্গিদের বিবৃতি, ‘সশস্ত্র আইএস যোদ্ধারা ইন্দোনেশিয়ার রাস্তায় হামলা চালিয়েছে। লক্ষ্য ছিল বিদেশি নাগরিক এবং সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী।’’

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, আপাত সহিষ্ণু মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ায় প্রতিপত্তি বাড়াতে কিছু দিন ধরেই তৎপর হয়েছে আইএস। ধর্মের টোপ দিয়ে মগজধোলাই চলছে। শিয়া-সুন্নি বিভেদ তৈরি করে চলছে প্রশিক্ষণ। গোয়েন্দাদের তথ্য বলছে, দু’শোরও বেশি তরুণ দেশ ছেড়ে সিরিয়া পৌঁছেছেন। মূলত সুন্নি অধ্যুষিত হলেও জাকার্তায় ১০ লক্ষেরও বেশি শিয়ার বাস। ফলে সুন্নি-জেহাদি আইএসের নিশানায় যে জাকার্তাই উঠে আসবে, সেই আশঙ্কা ছিলই। ইন্দোনেশিয়ার জঙ্গলে গা ঢাকা দেয়া সন্তোসো নামে এক জঙ্গি আইএসের হয়ে নাশকতার ছক কষছে বলে খবর ছিল পুলিশের কাছে। তবে এখনও সে অধরাই। পুলিশের দাবি, সিরিয়ায় বসে বাহরুন নইম নামে এক জঙ্গি এই হামলার ঘুঁটি সাজিয়েছে। এখন প্রশ্ন, এত তথ্য হাতে পেয়েও কেন এড়ানো গেল না হামলা?

নিরুত্তর পুলিশ। তবে আলোকপাত করছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, এই হানা ইন্দোনেশিয়ার অন্য হামলা থেকে আলাদা। জনবহুল রাস্তায় একই সঙ্গে একাধিক বিস্ফোরণ। তাতে বিভ্রান্তি বাড়ে প্রতিপক্ষের। দ্বিতীয়ত, নিশানায় রেস্তোঁরা-পানশালা। তাতে বেশি মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা বাড়ে।

আইএসের হামলায় এই ‘কনসার্টে’ সত্যিই থমকেছে জাকার্তা। টায়ার ফাটার আওয়াজেও বিস্ফোরণ-ভ্রম হচ্ছে পুলিশের। তবে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই এগিয়ে রাখছেন জাকার্তার বাহিনীকেই। তাঁদের মতে, একই ধাঁচের হামলা মোকাবিলায় মুম্বইয়ের লেগেছিল চার দিন। প্রাণ গিয়েছিল ১৭৩ জনের। প্যারিসেও নিহতের সংখ্যা ১৩৭-এ পৌঁছয়। তবে জাকার্তা ঘণ্টা পাঁচেকেই কাবু করেছে জঙ্গিদের। আততায়ী ছাড়া প্রাণ গিয়েছে দু’জনের। বড় বিপদ সামলে পালা মারেও এগিয়ে রয়েছে জাকার্তাই।

আমেরিকাকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার ক্ষমতা অর্জনকারী

koreaসংলাপ ॥ উত্তর কোরিয়া আমেরিকাকে মুছে ফেলার ক্ষমতা অর্জন করেছে। উত্তর কোরিয়ার জাতিসংঘ মিশন এক প্রতিবেদনে এ দাবি করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা সফলভাবেই হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে। কাজেই এখন তারা পুরো আমেরিকাকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারবে। উত্তর কোরিয়ার জাতিসংঘ মিশন এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি গত সপ্তাহের বুধবার প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, পরীক্ষাটির মাধ্যমে ছোট আকারের হাইড্রোজেন বোমার শক্তির বিষয়টি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। উত্তর কোরিয়া সত্যিই কোনো হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল কি না, তা নিয়ে আমেরিকাসহ কয়েকটি দেশ এর আগে সন্দেহ প্রকাশ করেছে।

গত ৬ জানুয়ারি হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষা চালানোর দাবি করে উত্তর কোরিয়া। হাইড্রোজেন বোমাকে বলা হয় ‘থার্মোনিউক্লিয়ার ডিভাইস। এটি দ্বিতীয় প্রজন্মের পরমাণু বোমা নামেও পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত পরমাণু বোমাগুলোকে বলা হয় প্রথম প্রজন্মের, যেখানে ছিল একটিমাত্র বিস্ফোরণ ব্যবস্থা। তবে দ্বিতীয় প্রজন্মের আনবিক বোমায় থাকে দু’টি বিস্ফোরণ ব্যবস্থা। কাজেই হাইড্রোজেন বোমার ধ্বংস ক্ষমতা প্রথম প্রজন্মের পরমাণু বোমার চেয়ে অনেক বেশি।

হুমকির জবাবে হাইড্রোজেন বোমা

kimসংলাপ ॥ পরমাণু যুদ্ধের হুমকি মোকাবেলায় নিজেদের রক্ষা করতেই হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষা চালানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন উত্তর কোরিয়া নেতা কিম জং উন।
পিয়ংইয়ং প্রথমবার সফলতার সঙ্গে তার হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে বলে গত ৬ জানুয়ারি উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যম ‘কোরিয়া কেন্দ্রীয় বার্তা সংস্থা’ বা কেসিএনএ প্রচার করার পর এই প্রথমবার কিম এ বিষয়ে মন্তব্য করলেন।
উত্তর কোরিয়া হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষা চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সমাজে এর বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় ওঠেছে। পাশাপাশি প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা বেড়ে গেছে। এর ফলে বৈরী প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে অপপ্রচারমূলক সম্প্রচার শুরু করতে সীমান্তে লাউডস্পিকার আবার চালু করে দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া।kim2
হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষা চালানোর জন্য কিম উত্তর কোরিয়ার গণবাহিনীর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে যান এবং সংশ্লিষ্টদের অভিন্দন জানান। কোরিয়া উপদ্বীপে শান্তি রক্ষার প্রয়োজনে এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদীদের পরমাণু যুদ্ধের হুমকি থেকে নিজেদের আত্মরক্ষা করতেই এই পরীক্ষা চালানো হয়েছে বলে কিম মন্তব্য করেন।
এদিকে, উত্তর কোরিয়া হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষা করার পর কোরিয় উপদ্বীপে সৃষ্ট উত্তেজনার কারণে আমেরিকা গত রোববার দক্ষিণ কোরিয়ায় পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম বমারু বিমান মোতায়েন করেছে আমেরিকা।
অপরদিকে উত্তর কোরিয়া হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষা করার পর কোরিয় উপদ্বীপে সৃষ্ট উত্তেজনার কারণে পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন, বি-৫২ বোমারু বিমান এবং এফ-২২ স্টিলথ জঙ্গিবিমান মোতায়েন করবে আমেরিকা। এ নিয়ে আমেরিকা ও দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা চলছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল লি সান-জিন এবং কোরিয়ায় মার্কিন সেনা কমান্ডার জেনারেল কার্টিস স্ক্যাপ্যারোটি এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থা ইয়োনহ্যাপ এ খবর দিয়েছে।
আমেরিকা ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা চুক্তি রয়েছে এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৫ হাজারের বেশি মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া, দেশটিতে প্রায় ৬০ বছর ধরে রয়েছে মার্কিন সেনা ঘাঁটি।

সিরিয়ায় রাশিয়ান হামলা অব্যাহত

syriaসংলাপ ॥ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইদলিব প্রদেশে জঙ্গি গোষ্ঠী আল-কায়েদা’র নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি কারাগারে বিমান হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। হামলায় প্রায় ৬০ ব্যক্তি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক কথিত মানবাধিকার সংস্থা-সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস।
সংস্থাটি জানিয়েছে, গত শনিবার প্রদেশের মা’রাত আন-নুমান শহরে আল-কায়েদা’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আন-নুসরা ফ্রন্টের নিয়ন্ত্রিত একটি কারাগার ও একটি ধর্মীয় আদালতে হামলা চালায় রাশিয়া। অবজারভেটরি দাবি করেছে, জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রিত শহরটির কয়েকটি ভবনে রুশ জঙ্গিবিমান থেকে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয় এবং এতে অন্তত ২৯ সন্ত্রাসী ও ২১ বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়।
সিরিয়া সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে সিরিয়ায় তাকফিরি সন্ত্রাসীদের অবস্থানে বিমান হামলা শুরু করে রাশিয়া। এদিকে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় লাতাকিয়া প্রদেশের কয়েকটি গ্রাম দখল করে বিদেশি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের একটি গুরুত্ব্বপূর্ণ সরবরাহ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে দেশটির সরকারি সেনারা। এ ছাড়া, সিরিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা সানা জানিয়েছে, রুইসেত আল-কামুয়া, আল-মাগেইরা, হাউশ আল-মাগেইরা, রুইসেত বানি জাযি এবং কেদিন গ্রাম সন্ত্রাসীদের দখলমুক্ত হয়েছে।
অপরদিকে সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও ডেপুটি যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমানকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যক্তি’ বলে মন্তব্য করেছে ব্রিটেনের দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট। দৈনিকটি তাকে ক্ষমতা-প্রিয়, আগ্রাসী ও উচ্চাভিলাষী বলেও অভিহিত করেছে।
বিল ল’-এর লেখা এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিন সালমান ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যে পাশবিক যুদ্ধ শুরু করেছেন তা শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তিনি ২৯ বছর বয়স্ক এই সৌদি প্রিন্সকে ক্ষমতা-প্রেমিক বলেও উল্লেখ করেন। বিল লিখেছেন, ‘সৌদি রাজতান্ত্রিক সরকার এখন তার আঞ্চলিক শত্রু ইরানের বিরুদ্ধে মধ্যযুগীয় নাইট বা উচ্চাভিলাষী যুদ্ধবাজদের মতই বিপজ্জনক তৎপরতা চালাচ্ছে। আর এ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে এমন এক ব্যক্তি যে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হওয়ার জন্য দৃশ্যত খুব তাড়াহুড়া করছেন। সমালোচকরা বলছেন, প্রিন্স (ডেপুটি যুবরাজ) সালমান অনেক অর্থ-সম্পদ জমিয়েছেন, কিন্তু অর্থ নয় ক্ষমতাই তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তার বাবা ৭৯ বছর বয়স্ক সালমান যখন গত বছরের জানুয়ারিতে সৌদি সিংহাসনে বসেন তখনই তিনি অসুস্থ। তাই পুত্রের ওপর খুব বেশি নির্ভর করতে বাধ্য হন তিনি। স্মৃতি-বিভ্রাটসহ নানা ধরণের মানসিক রোগের শিকার রাজা সালমান দিনের মাত্র কয়েক ঘন্টা কাজে মনোযোগ দিতে পারেন। তাই বাবার প্রহরী এই পুত্র তথা বিন সালমানই হচ্ছেন সৌদি আরবের প্রকৃত রাজা।”
ইন্ডিপেন্ডেন্টের এই নিবন্ধে বিল আরও জানিয়েছেন, সালমান রাজা হওয়ার পর কয়েক মাসের মধ্যেই বিন সালমানের ক্ষমতা নাটকীয়ভাবে বাড়ানো হয়। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পাশাপাশি জাতীয় জ্বালানী কোম্পানি আর্মাকো’র প্রধান হন প্রিন্স বিন সালমান। এ ছাড়াও হন শক্তিশালী নতুন সংস্থা অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন বিষয়ক পরিষদের প্রধান এবং এরই সুবাদে পান সব মন্ত্রণালয়ের ওপর নজরদারির ক্ষমতা। সৌদির জন-বিনিয়োগ তহবিলেরও দায়িত্ব পান বিন সালমান। তাকে ডেপুটি যুবরাজ বলে ঘোষণা করা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বী যুবরাজ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মদ বিন নায়েফের ওপর তার কর্র্তৃত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
ইয়েমেনের শিয়া হুথি মুসলমানদের নেতৃত্বাধীন জনপ্রিয় আনসারউল্লাহ আন্দোলনকে দমনের জন্য দেশটির ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় সৌদি সরকার। এ প্রসঙ্গে বিল লিখেছেন, এ যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয় বিন সালমানকে যাতে তার বীরত্বটা ফুটে উঠে। তারা ভেবেছিল অতি দ্রুত ও খুব সহজেই বিজয়ী হবেন বিন সালমান এবং (ওয়াহাবি-মতবাদে বিশ্বাসীদের অপব্যবহারের ক্ষেত্রে সফল) আধুনিক সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা দাদা ইবনে সৌদের মতই সফল হবেন নাতি। কিন্তু ইরানের সমর্থিত দুর্ধর্ষ হুথিরা (সৌদি সামরিক হস্তক্ষেপের জবাবে) যে ২০০৯ সালে সৌদি বন্দর জিজান দখল করে বসেছিল তা যেন ভুলে গেছেন অনভিজ্ঞ নতুন সৌদি সরকার। সাত কোটি ডলার অর্থ দেয়ার পরই তারা ওই বন্দর ছেড়ে দেয়। হুথিরা আলকায়দার মোকাবেলায় একটি বড় শক্তি হওয়ায় তারা সৌদি আরবের জন্য প্রত্যক্ষ হুমকিও ছিল না। প্রায় এক বছর ধরে নির্বিচার বিমান ও বোমা হামলা চালিয়ে ইয়েমেনের অবকাঠামো ধ্বংস করেছে সৌদি সরকার। কিন্তু এখনও ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও দেশটির উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ হুথিদের দখলেই রয়েছে। আলকায়দা ও সমমনা কয়েকটি জঙ্গি গোষ্ঠী বোমা মেরে হুথিদের আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার দৃঢ়-প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেছে।
সৌদি রাজ-পরিবারের অনেকেই দাম্ভিক বিন সালমানের আচরণে ক্ষুব্ধ। তারা রাজা সালমান ও মুহাম্মদ বিন নায়েফকে ক্ষমতাচ্যুত করারও আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু এইসব আহ্বানে কোনো কাজ হয়নি। এখন প্রশ্ন হল, বিন সালমানের হঠকারী স্বভাব কি তাকে ইরানের সঙ্গে সংঘাতে নামাতে পারে? আর সেটা কখন ঘটবে সেটাই এখন দেখার বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন বিল। তিনি লিখেছেন: সৌদি ডেপুটি যুবরাজ হয়ত দাদার মত নানা সামরিক অভিযানে সফল হওয়ার কথা ভাবছেন। হয়তো তিনি ইরানের ওপর বিমান হামলাও চালাতে পারেন।

সৌদ পরিবারের সম্পদ কত?

saudi arob_1সংলাপ ॥ সবচেয়ে ধনী সৌদ পরিবারের সম্পদের বর্তমান বাজারমূল্য হচ্ছে ১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। তাদের আয়ের মূল উৎস হচ্ছে জ্বালানী তেলের খনি। এছাড়া, মূল্যবান জায়গা ও বড় বড় ব্যবসায়িক চুক্তি থেকে শুরু করে সৌদি আরবের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সবকিছু থেকেই আয় করে এই রাজপরিবার। এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ইনসাইডার মাংকি। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, পুরো সৌদি আরব রাষ্ট্রটিই সৌদ পরিবারের অঢেল সম্পত্তি ও আয়ের উৎস, যেটিকে তারা পারিবারিক সম্পত্তি বলে মনে করে। এছাড়া তারা প্রতি বছর হজ্ব থেকেও বিপুল অংকের অর্থ আয় করে।

সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী পরিবারগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে মার্কিন প্রতিষ্ঠান ইনসাইডার মাংকি। তালিকা তৈরিতে প্রতিষ্ঠানটি ফোর্বস ও এমএসএন মানির সম্পদশালী পরিবারের দুটো তালিকা সমন্বয় করেছে, একটি পরিবারের মোট সম্পদমূল্য ও কত দিন ধরে কী কী ব্যবসায় একটি পরিবার জড়িত। দুটো বিষয়কে এ তালিকা তৈরিতে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। সম্পদের জন্য ৩০ নম্বর ও ব্যবসার স্থায়িত্বের জন্য ২০ নম্বর – মোট ৫০ নম্বর সমন্বয় করে ধনী ১০ পরিবারের তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে। পুরো ৫০ নম্বর নিয়ে তালিকার ১ নম্বরে রয়েছে সৌদি রাজপরিবার। অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে সৌদি আরব শাসন করা এই রাজপরিবারটি আল সৌদ নামে পরিচিত। সৌদ হচ্ছে তাদের বংশের নাম।

ইতিহাসবিদ ও মধ্যপ্রাচ্য বিশারদ নাসিরুস সাইদ প্রণীত ‘আল সৌদের ইতিহাস’ গ্রন্থমতে, ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকারের অনুমতি নিয়ে হিজাজের নাম পরিবর্তন করে নিজ বংশের নাম অনুযায়ী এই বিশাল আরব ভূখণ্ডের নাম রাখে সৌদি আরব। এই দেশই (বর্তমান সৌদি আরব) বিশ্বের একমাত্র দেশ যার নামকরণ করা হয়েছে দেশটির সংখ্যালঘু একটি গোত্রের নাম অনুসারে।

আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ ছিল ‘নজদ’ নামক মরু অঞ্চলের অধিবাসী। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য সে ওয়াহাবি সম্প্রদায়ের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়। মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য ইংরেজদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই উগ্র মতবাদটির জন্ম দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হয়। ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যালফোর ফিলিস্তিনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই ঘোষণা ব্যালফোর ঘোষণা নামে ইতিহাসে খ্যাত। এ ঘোষণা দেয়ার আগে ব্রিটিশরা সৌদি রাজা আবদুল আজিজের কাছ থেকে লিখিত সম্মতিপত্র আদায় করেছিল।

ফ্রান্সের মুসলমানদের বোধদয়!

franceসংলাপ ॥ রাজনীতিকরা কোন ধর্ম সম্পর্কে প্রকাশ্যে আলোচনা-সমালোচনা করেন না। গদি হারাবার ভয়। ক্ষমতা হারাবার ভয়। বিশেষ করে বাংলাদেশে এই মনোভাব আত্ম-বিপ্লবী চেতনা থেকে অনেক দূরে। দলের নেতা-নেত্রীদের হাতে এখন তসবী, গোমেদ, পলা, প্রবাল ইত্যাদি এবং পোষাকে জোব্বা, দাড়ি, বাহারী টুপি, ঘোমটা, বোরখা শোভা পায়। বাড়িতে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাও নিয়মিত হয়। ছেলেমেয়েদের পরীক্ষায় সাফল্য চেয়ে অনেকেই মসজিদ-মন্দির-মাজারে মানত করেন। এসব দেশবাসী দেখে যাচ্ছে। ধর্মীয় অন্ধ-সংস্কারে বিশ্বাস করব আবার নিজেকে যুগোপযোগী দেশপ্রেমিক বলে জাহির করব, তা কখনও হতে পারে? আমাদের দেশে নজরুল-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে ভাষায় ধর্মীয় অন্ধ-সংস্কারের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হয়েছেন, তার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেননি আমাদের দেশের রাজনীতিকরা। আস্তিক-নাস্তিক হওয়া তো দূরের কথা। সংসদ দখলই মূল কথা। শান্তিপূর্ণ ক্ষমতায় যাওয়ার এ এক পথনির্দেশিকা। আধিপত্যবাদী শক্তিগুলো এটাই চায়। সমস্ত শক্তিগুলোকে সংসদে ঢুকিয়ে দাও। গাড়ি, বাড়ি, ভাতা, মাইনে বাড়িয়ে তাদের ব্যস্ত রাখো ভোগবিলাসে। ধর্মের নামে লড়িয়ে দাও নিচতলার মানুষে মানুষে। তাদের বিভ্রান্ত কর, নেশাগ্রস্ত কর, বাঙালি মূল্যবোধ ভেঙে চুরমার করে দাও। ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণ করলেই যদি জনতাকে সংগঠিত করা যেত, তাহলে মুসলিম লীগ বাংলাদেশে সাইনবোর্ড হয়ে যেত না। কেননা এককালে সমস্তই নিয়ন্ত্রণ করতেন তারা। তাই সংশয়, এ বছরে রাজনীতিকরা জাতিকে কোনও দিশা দেখাতে পারবেন কি!
সম্প্রতি খুলে দেয়া হচ্ছে ফ্রান্সের বেশ কিছু মসজিদের দরজা। সপ্তাহ শেষে এই মসজিদগুলোতে চা-চক্রের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে ইসলাম নিয়ে আলোচনার-সমালোচনার সুযোগ পাবেন সাধারণ মানুষ। ফ্রান্সে জঙ্গি আক্রমণের স্মৃতি এখনও টাটকা। এরমধ্যে এসে গেল শার্লি এবদো কাণ্ডের বর্ষপূর্তি। ব্যঙ্গচিত্র পত্রিকা শার্লি এবদোর অফিস এবং ইহুদি সুপারমার্কেটে অতর্কিতে হানা দিয়ে ১৭ জনের প্রাণ কেড়েছিল জঙ্গিরা। এর দশ মাস পরে আবার জঙ্গি হামলায় কেঁপে ওঠে প্যারিস। এবার ১৩০ জনের প্রাণ নিল জঙ্গিরা। উভয় ঘটনাতেই আঙুল উঠেছে মুসলমানদের দিকে। কোথাও যেন বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের নিয়ে বিশ্বাসের অভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে ফ্রান্সের সবথেকে বড় মুসলিম সংগঠন ‘ফ্রেন্স কাউন্সিল অফ দ্য মুসলিম ফেথ’ (সি এফ সি এম)। সংগঠনের সভাপতি আনুয়ার কিভেবেখ জানিয়েছেন, মসজিদে অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষদের মতামত বিনিময়ের জন্যই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শার্লি এবদোর স্মৃতির থেকেও জরুরি ছিল ১১ জানুয়ারি উদযাপন। এই দিনই সংহতির দাবিতে ফ্রান্সের পথে নেমেছিলেন কয়েক লক্ষ মানুষ। চা, পেষ্ট্রি খেতে খেতে মানুষ আলোচনা করবেন ইসলাম সম্পর্কে। শুধু তাই নয়, কেউ চাইলে দিনের পাঁচবার আজানের সাথে একবার অংশ নিতেও পারেন। ফ্রান্সে প্রায় আড়াই হাজার মসজিদ রয়েছে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহ্যশালী মসজিদগুলোকেই আলোচনার জন্য বেছে নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে প্যারিসের ‘গ্র্যান্ড মসজিদ’। এটা যুগোপযোগী বোধোদয় বলে চিহ্নিত করছেন বিশ্বজুড়ে ইসলামী চিন্তাবীদরা। ছড়িয়ে পড়ুক এই বোধোদয় সমগ্র বিশ্বজুড়ে, শান্তি ইসলাম-ইসলাম শান্তি এই হোক ধ্বনি মুসলমানদের দেশ হতে দেশান্তরে।