শেষ পাতা

১৪২৮: তোমায় নিয়ে আশাবাদ

সংলাপ ॥ বাঙালি জাতির স্বপ্নগুলো বাস্তব হোক নতুন বছরে। অন্ধকার ফিকে হোক ক্রমশ, অনাবিল আলোয় ভরে উঠুক বংলাদেশ। মানব সভ্যতার ইতিহাস সাক্ষী, নেতির জয় কখনও হয়নি। বাঙালি জাতি খাদের কিনার থেকেও বার বার ফিরে এসেছে। তাই চোখে স্বপ্নটা থাক বর্তমান। অন্ধকার কাটিয়ে আলো আনার দায়িত্বটা সকলকেই নিতে হবে। সকলকে নতুন বছরের হার্দিক শুভেচ্ছা। নতুন বছর প্রত্যেকের ভাল কাটুক।

ভাল থাকাটা, ভাল হওয়াটা বড্ড অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। একটা কালো অন্ধকার মেঘ বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নতুন একটা বছর সঙ্গে নিয়ে হাজির হবে বৈশাখের সকালে, ১৪২৮ পুরো সময়টা সেই সকালের মতোই ঝকঝকে হয়ে থাকুক,  উজ্জ্বল হয়ে উন্নতির পথে এগিয়ে যাক, বৈশাখে থাক এই আশাবাদ।

গত বছরের আবর্জনা দূর হওয়ার প্রত্যাশায়, সর্ব অঙ্গে মলীনতা মেখে আমরা নতুন বছরকে আবাহন করেছি। অতীত ভয় দেখায়। আতঙ্ক তৈরি করে। অন্ধকার বাড়িয়ে দেয়। করোনার থাবায় ১৪২৭ এর পয়লা বৈশাখ জুড়ে ছিল না উৎসব। বারো মাসে তালিকায় বাংলা বছরের প্রথম দিনটা নিজস্ব মহিমায় স্থান করে নিতে না পারলেও হৃদয়ের বাঙালির বর্ষবরণের আনন্দ। আবার বৈশাখ, দেশ জুড়ে নতুন জামা, দোকানে দোকানে হালখাতা, মিষ্টিমুখ, উষ্ণ আন্তরিকতা ফিওে আসুক নতুনকে স্বাগত জানানোর আয়োজন যার স্বাদ বছর ভরে চলবে।

দিন বদলের পালায় বাংলা বছর তার গরিমা একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে পর্দার অন্তরালে। বাংলা বছর এখন ইংরেজি ক্যালেন্ডারের দিন মাত্র। নিয়মরক্ষার চেয়ে বেশি কিছু হয় না। এ সব আক্ষেপ এত দিনে বাঙালির  গা-সওয়া। কিন্তু হিসেবের নতুন বছরের খাতা খোলার লগ্নে হাতে কী রইল, তা ভুললে চলে না।

একটু পিছনে তাকালে দেখা যাবে, কিছু দিন ধরে চার দিকে যে সব কা- ঘটে চলেছে, সমাজ ও সংস্কৃতির স্বাভাবিক ছন্দ যে ভাবে ধাক্কা খেয়েছে এবং খাচ্ছে, যেভাবে ভাবনায় দীর্ঘ ছায়া ফেলছে ভয় এবং অবিশ্বাস, তাতে বাঙালি জাতির গৌরবের ধ্বজা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে রাখার দৃঢ় প্রত্যয়টার প্রশ্নে ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের সর্বত্র। বৈশাখেই নিজেদের ঐতিহ্য এবং অহঙ্কারের ঢাক পেটানোর দিনে আত্মসমীক্ষা এবং নিজের বিচার জরুরি।

পরিবর্তন এল, তার সঙ্গী আছে কিছু স্বপ্নও। লোক বিশ্বাস, অতীতের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে তৈরি হবে ভবিষ্যতের পথ। কিন্তু এগারো বছর পেরিয়ে আবার চার পাশে কেমন এক অস্থিরতার বাতাবরণ। এমন তো হওয়ার কথা ছিল না! তবে কেন?

সব কিছুতেই রাজনীতি এবং চক্রান্ত দেখতে বাংলাদেশের রাজনীতিকরা বেশ পটু হয়ে উঠছে। কেউ কোনও প্রশ্ন বা প্রতিবাদের ভাষা উচ্চারণ করলেই তাতে কেউ কেউ দ্রুত চক্রান্তের গন্ধ টের পেয়ে যান। যারা শাসকের আসনে থাকেন, গন্ধবিচারের ক্ষমতাও আবার তাঁদেরই বেশি থাকে! নিজেদের কোনও কাজ বা সিদ্ধান্তের জন্য ভুল স্বীকার নেই। দল-মত-রং নির্বিশেষে এটা মোটামুটি স্বতঃসিদ্ধ। সেখানে কোনও পরিবর্তন আসেনি।

অসহিষ্ণুতা? কেন এত হিংসা? বাতাসে কেন এত বিষ? আমরা কি পরস্পরের উপর বিশ্বাস হারাচ্ছি? যাঁরা রাজনৈতিক কান্ডারি, আস্থা ও বিশ্বাসের পরিস্থিতি তৈরি করার বড় দায়িত্ব কিন্তু তাঁদেরই থাকে। কারণ তাঁরা দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে দায়বদ্ধ। সেখানে শিথিলতা ঘটলে বিষয়টি শিষ্টের দমন ও দুষ্টের পালনে পর্যবসিত হয়। শরীর শক্তপোক্ত না হলে যেমন রোগ সহজে বাসা বাঁধার সুযোগ পায়, ব্যাপারটি তেমনই চলমান।

এগারো বছরে অনেকটাই বদলেছে বাংলাদেশের চেহারা। শহর থেকে গ্রাম, সেই বদলের মুখচ্ছবি স্পষ্ট। একের পর এক জনকল্যাণমুখী প্রকল্পে বিভিন্ন স্তরে বহু মানুষ সরাসরি লাভবান। জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। আত্মিক ‘উন্নয়ন’ হয়তো প্রকৃত অর্থেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে। তবু কেন মানুষের এত অবিশ্বাস বাড়ছে রাজনীতিকদের ওপর? শিক্ষিত সমাজের একটু সদিচ্ছা, সততা, সঙ্কীর্ণতামুক্ত, প্রতিস্পর্ধাহীন মানসিকতা দরকার। ‘আমি’ ছেড়ে ‘আমরা’ হয়ে ওঠার উদারতা। মানুষের গণতন্ত্রে শিক্ষিত সমাজ বড় গুরুত্বপূর্ণ। এতটুকু উদারতা বাঙালি শিক্ষিত সমাজ দেখাতে বদ্ধপরিকর হতে পারলে বাঙালির নববর্ষ সত্যিই ‘শুভ’ হয়ে উঠবে। যার গর্বিত ভাগীদার হবে সমগ্র জাতি।

গোটা বছর ধরে অনেক রকম সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হয়েছে। মানবাত্মার সাংঘাতিক অসম্মান ঘটিয়ে বাংলার নানা প্রান্তে মাথা তুলেছে হিংসার বিষ। অশান্ত, উত্তপ্ত, রক্তাক্ত হয়ে রইল বাংলার মাটি। গণতন্ত্র নিয়ে রাজনীতিকদের নির্লজ্জ ও বেনজির আঘাত এবং মিথ্যাচার প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে দেশবাসীকে। আরও নানা নেতি হানা দিয়েছে এবং হানা দিতে চাচ্ছে নানা রন্ধ্র পথে।

ইতিবাচক কিছু ঘটেনি গত একটা বছরে, এ কথা বলা যায় না যদিও প্রাণঘাতী করোনার হানায় নাকাল পুরো বিশ্ব। জীবন তার আপন ছন্দ, রূপ, রং, স্পর্শ, আঘ্রাণ নিয়ে নিরন্তর সামনের দিকে নিয়ে চলেছে আমাদের প্রত্যেককেই। শত-সহ¯্র নেতির সাক্ষী হতে হলেও সেই নিরন্তর অগ্রগতিতেই ইতিবাচকতার সবচেয়ে আনন্দ। বছরের শেষ সকালে পৌঁছে খেরো খাতার শেষ পাতায় অগ্রগতির যোগফল থাক, সে যোগফলকে নতুন খাতায় তুলে নেয়ার তোড়জোড় থাকুক দেশবাসীর মধ্যে। নেতির হিসেব ওই শেষ পাতাতেই শেষ হয়ে যাক। বয়ে যেন না নিতে হয় পরের নতুন খাতায়। অঙ্গীকারটা এমনই হোক। দুটো ১৪২৭-১৪২৮ এর মধ্যে অনেকখানি ব্যবধান সঞ্চারিত হোক পৃথিবীর একটা মাত্র আবর্তনকে সাক্ষী রেখে, ১৪২৮-এর শুরুতে অনেক কিছু নতুন আলোয় ধরা দিক, এমনই আকুতি সময়ের চোখে। নতুন বছর বার বারই প্রতীকী তারুণ্য নিয়ে ধরা দেয়। কার্যক্ষেত্রে এ যুগে ইংরেজি নতুন বছরটাই আসল নতুন বছরের তকমা আদায় করে নিয়েছে। বাংলা নববর্ষ কার্যত আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত। তবু পয়লা বৈশাখ বাঙালির হৃদয়ে, বাঙালি মননে স্নিগ্ধ, নিষ্পাপ, নির্মল অস্তিত্ব নিয়ে ধরা দেয় আজও। অতএব, পয়লা বৈশাখ আজও এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী সন্ধিক্ষণ, যে সন্ধিক্ষণে জীবনের শপথগুলোকে ঝালিয়ে নেয়া যায় নিষ্কলুষ। অনেক কিছু হয়তো ভুল হয়ে গিয়েছে, অনেক কিছু হয়তো অনাকাক্সিক্ষত পথে এগিয়েছে, গোলমাল হয়ে গিয়েছে হয়তো অনেক রকম হিসেব গোটা একটা বছর ধরে। সেই সমস্ত ভেস্তে যাওয়া হিসেবের খাতা সপাটে বন্ধ করে নতুন খাতা খুলে ফেলার অবকাশ এবারেও নিয়ে এসেছে পয়লা বৈশাখ।

চেতনায় বাঙালিত্ব

বাহাদুর বেপারী ॥ আমাদের পরিচয় বাঙালি, আমাদের অহংকার বাঙালিত্ব। আমাদের অস্তিত্বের অংশ মা-মাতৃভাষা-মাতৃভূমি। বাংলা ভাষা পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ ভাষা। বাংলার প্রকৃতি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর প্রকৃতি। বাংলার সম্পদ আমাদের মানুষ। বাঙালি  অতিথি পরায়ণ জাতি। এই ভূখন্ড, জাতির ধর্ম কিন্তু ইসলাম না, হিন্দু না, বৌদ্ধ না, খৃষ্টানও না। এর নিজস্ব ধর্ম আছে। এই ধর্মের নাম মানবতা। সেই ধর্মেরই একটি কাজ অতিথি পরায়ণতা। বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে বারবার ষড়যন্ত্র হয়েছে কিন্তু সব ষড়যন্ত্র মুখ থুবরে পড়েছে, বাঙালি পৃথিবীর সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বারবার। জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বজ্র কঠিন, সুকোমল, মহান ডাকে বাঙালি জাতি বিশ্বের বুকে স্বাধীন হয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। তৎকালীন সময় পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল এই বাঙালিরাই। দেড় কোটি বাঙালিকে ঔষধ দিয়ে, অস্ত্র-ট্রেনিং দিয়ে, খাদ্য, আশ্রয় দিয়ে জাগ্রত রেখেছে এই বাঙালিরাই। ওই সীমানা কিন্তু বাংলার বাইরে ছিল না। ওই পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা রাজ্যগুলোই ছিল বাঙালি অধ্যুষিত এবং তারাই আমাদের বাঙালিকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে, স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত সব কিছুই করেছে।

চেতনায় বাঙালিত্ব থাকলে আমরা সবাই সত্যমানুষ। আমরা এখন আছি সত্যমানুষের যুগে। এক হাক্কানী দিবসে তিন ডিজিটের কথা নিশ্চয়ই সবার স্মরণ আছে। পৃথিবী সেই একটি জায়গায় আসতেছে, সত্যমানুষের যুগে। সত্যমানুষকুলের এই ধারা অব্যাহত থাকলে এই ডিজিট ৯৯ ছাড়িয়ে ১০০-তে যাবেই যাবে। তখন এই বাংলা, এই পৃথিবী হবে সত্যমানুষের পৃথিবী। এই বাংলায় অবশ্য-অবশ্যই ৩০ সালে ধর্ম নিয়ে আর ঝামেলা থাকবে না। ৩৮ সালে বাংলার সংসদ হবে সত্যমানুষের সংসদ, ভালো মানুষের সংসদ।

হাক্কানী সত্যব্রত দিবস, সত্য দিবস, আনন্দের দিবস। আমরা আনন্দে-মহাআনন্দে থাকি। আমার সত্য, আপনার সত্য এক হোক। আসুন সত্যকে জেনে নেই, লক্ষ বছরের সত্যের যে ধারাবাহিক ইতিহাস সেটিতো এই হাক্কানীরই ইতিহাস, সত্যব্রত দিবসেরই ইতিহাস সেটি আজ নতুন করে জেনে নেই। পৃথিবীতে এই একটি দিবসে আমার-আপনার সত্যের সাথে একাত্ম হই। সেই সত্যের ধারাবাহিকতা আমাদের চেতনায় থাকুক। আর কোন ভাইরাস যেন আমাদের চেতনায় আঘাত না করে। যার আশীর্বাদ ও কৃপায় থাকি তার কাছে আবেদন, ভাইরাস যেন আমাদের চেতনাকে আর আঘাত করতে না পারে। আমরা আঘাতহীন থাকি, মুক্ত, শূন্য থাকি। বাঙালিত্বকে ধারণ করি, বাঙালিত্বই হোক আমাদের চেতনা আর এই চেতনার মাধ্যমে হই আমরা সত্যমানুষ। আর ‘ক্বুন-ফাইয়াক্বুন’-এর আশীর্বাদে থাকি। এই আশীর্বাদে থাকলেই পৃথিবী হবে সুন্দর, আমরা হবো সুন্দর, সবাই হবো ভালো মানুষ। আর আমরা সমর্পণ করি আমাদের সকল কর্মকা- এই সকল সত্যমানুষের কাছে। বাংলাদেশ সুন্দর হোক, ভালো হোক। অনেক সুন্দর হয়েছে, অনেক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু সংখ্যা বেড়েছে বিবাহবিচ্ছেদ, বেড়েছে মাদকাসক্তির সংখ্যা। যে কোন সময় বিপর্যয় ঘটতে পারে, আর সেই বিপর্যয়কে সামনে রেখে সূফী সাধক শেখ আবদুল হানিফ একদিন বলেছেন, এই বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতিকে সাসটেইনেবল করতে হলে সামাজিক মূল্যবোধ এবং পারিবারিক শিক্ষাকে সুন্দর করতে হবে। নচেৎ যে অবস্থা শুরু হয়েছে, তাতে আমাদের ঘর-সংসার আর পারিবারিক জীবন ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছে। আর কিছু লোভী চক্র বের হয়েছে যারা এই জনপদের মানুষের একটু জায়গা-জমিনের প্রবলেম থাকলে সেখানে আঘাত হানে। একদিন নির্বাচনী ক্যাম্পিং-এ যাওয়ার সময় ৮০ বছরের এক বৃদ্ধা আমাকে বললেন, তোর নাম আমি জানি বাহাদুর। তোর দুইটি কাজ, যারা গাজা খায় তাদের মেরে ফেলবি আর যে মানুষের জমি দখল করে, যার জমি তাদের ফিরায়ে দিতে হবে। জায়গা-জমি জোরদখল, বিবাহ-বিচ্ছেদ আর মাদকাসক্তির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যে সামাজিক বিপর্যয় ঘটছে, সে বিপর্যয় থেকে জাতি মুক্তি পাক। বাঙালি শ্রেষ্ঠ জাতি, তার পরিচয় হতে হবে চিন্তা ও কর্মে। পৃথিবীর এমন কোন রাষ্ট্র তৈরি হয় নি যেখানে বাঙালির উপস্থিতি ছিল না। যে রেড ইন্ডিয়ান জাতির কথা বলা হয়, প্রমাণ হয়েছে তারাও বাঙালি। আমেরিকা স্বাধীন করেছে বাঙালি।

মালদ্বীপে বাস করে এক ছেলে তাকে একদিন জিজ্ঞাসা করলাম, বললো – দুই লক্ষ মালদ্বীপবাসীর মধ্যে এক লক্ষ বাঙালি, তারা মুসলমান। জিজ্ঞেস করলাম তাহলে কতো অংশ বাঙালি, বললো আসলেতো সাংঘাতিক ব্যাপার। বাঙালির কি আছে, জিজ্ঞাসা করাতে ছেলেটি ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্র, চিন্তায় পড়ে গেছে, বললো বাংলায় বাজার করা যায়, মাছ, গাছ পানি এগুলো বাংলা শব্দ, প্রকৃতি দেখি বাংলায়, বলে খুব খুশি। ভুলে গেলে চলবে না, হিমালয়ের পাদদেশ থেকে যে পানি গড়ায়ে বাংলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যেখানেই গিয়ে পড়েছে সেটাই বাংলা। হোক সে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া কিংবা শ্রীলংকা আর মালদ্বীপ সবই বাংলা। সৃষ্টিকর্তার কোন ইচ্ছা ছিল বলেই প্রকৃতির এই খেলায় বাংলার জল, আলো-বাতাস পেয়ে এগুলো বাংলার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ভৌগলিকভাবে যারই দখলে থাক না কেন বাংলারই অঞ্চল।

নবী মোহাম্মদ (যাঁর কৃপা আমাদের উপর বর্ষিত) যদি এই বাংলায় জন্মগ্রহণ করতেন তাহলে বেহেশতের ফল হতো আম, লিচু, কাঁঠাল, দুধের নহর হতো বাংলা। বেহেশতের যে দুধের নহরের কথা বলা হয়েছে, উটে আর কতটুকু দুধ হয়! আরবেতো দুধের নহর নেই, বাংলায়তো দুধে ভরপুর। ওইটারতো অভাব ছিল তাদের, এজন্য দুধের নহর থাকবে বেহেশতে মানে ভবিষ্যৎকাল। আর আমাদের এই বাংলায় বর্তমানেই আছে বেহেশতী সকল কিছু প্রাকৃতিকভাবে। যে কোন ফলই আমরা খাই সব ফাটাফাটি বিশে^র আর কোথাও এমন সুস্বাদু নাই। কাঁঠালতো সর্ব রোগের মহৌষধ। বাংলার ফল-ফুলই শুধু নয়। আউশ ধানের মার (গ্রামে ভাতের ফেন বলে) যে সুস্বাদু খেলে আর কিছু লাগে না। ব্রিটেন থেকে আসা আমার পরিচিত ভাই বলছেন ব্রিটেনে এক বাটি ভাতের স্যুপ বিক্রি হয় ১০ পাউন্ডে, বাংলাদেশী টাকায় প্রায় বারশত টাকা। বাংলার কোন কিছুই ফেলনা না। বাঙালি জাতি হিসেবেও ফেলনা না। বারবার বহি:শত্রু দ্বারা আমরা আক্রান্ত হয়েছি, অনেকে বলেছে এরা ফেলনা, এদের থেকে সব নিংড়ে নিতে হবে। কিন্তু বাংলার সম্পদ অফুরন্ত, শেষ হবার নয়, বাঙালি বীরের জাতি বারবার সব বাধা প্রতিহত করে প্রমাণ করেছে। সাধককুল বলে তোমরা পশ্চাদপদ নও, সত্যের সাথে যুক্ত হও। সত্য হতে সরে যেও না। বাংলাতো সাধককুলের আশীর্বাদধন্য। অসংখ্য সাধক শুয়ে আছেন এই মাটিতে। তোমরা আলোর সাথে যুক্ত হও। সেই আলো যদি হয় বিশাল বড় পাওয়ার হাউজ, তাহলে তো বাঙালি হবেই হবে আলোকিত। আবার ধারণ করার ক্ষমতা যদি না থাকে তো অবশ্যই বার্স্ট হয়ে যাবে। ধারণ করার জন্য ধীরে ধীরে তৈরি করা হয়। সময় ও কর্মের মধ্য দিয়ে তৈরি হয় বাঙালি, সে সাধকেরই আশীর্বাদ। আমরা চাই হক-হক হাক্কানী, তুমি কে, আমি কে বাঙালি-বাঙালি। আসুন সবাই মিলে আমরা বলি, জয় হোক হাক্কানীর, জয় হোক বাংলার, জয় হোক বাঙালিত্বের। জয় হোক, মুক্ত হোক আমার চেতনা। আমার চেতনায় আর ভাইরাস না থাকুক। আমার লক্ষ বছরের এই মেধা শূন্য থাকুক, যেমন ইচ্ছা, তেমন করে আমরা খেলবো, গড়বো সত্যমানুষের অনুস্মরণ করে। জয় হোক সত্যমানুষের।

সুপ্রভাত বাংলাদেশ বাংলাদেশের পোশাক খাত ছাড়িয়ে গেল ভিয়েতনামকে

সংলাপ ॥ করোনার কারণে এলোমেলো সারাবিশ্ব। যার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে। সেই করোনাকালীন আবহের মাঝেই তৈরি পোশাক খাতে ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলল বাংলাদেশ। জাতিসংঘ ও বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার অঙ্গ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার আইটিসির সর্বশেষ এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

দেখা যায়, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ১২ মাসে পোশাকের বিশ্ববাজারে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনাম রফতানি করেছে ২৭ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার আর বাংলাদেশ করেছে ২৯ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক। অর্থাৎ পোশাক রফতানি করে ভিয়েতনামের চেয়ে ১ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার বেশি আয় করেছে বাংলাদেশ।

অথচ ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের মে পর্যন্ত ১১ মাসে বাংলাদেশের চেয়ে ভিয়েতনামের আয় ২ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার বেশি ছিল। ওই সময়ে তৈরি পোশাক থেকে বাংলাদেশের রফতানি আয় ছিল ২৫ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার আর ভিয়েতনামের ছিল ২৮ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার।

তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারকরা বলছেন, করোনাকালে সরকারের দেয়া প্রণোদনা এই খাতের ঘুরে দাঁড়াতে বেশ বড় ভূমিকা রেখেছে। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে আরও নীতি ও অর্থ সহায়তা দরকার বলে জানান তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ নাসির।

বিজিএমইএ’র তথ্য মতে, ২০২০ সালের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সময়) বিশ্ববাজারে ৯৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদশ। একই সময়ে ভিয়েতনাম রপ্তানি করে ১ হাজার ৫০ কোটি ৯১ ডলারের তৈরি পোশাক। অর্থাৎ গত বছরের প্রথম পাঁচ মাসে বাংলাদেশের চেয়ে ৮২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি বেশি করেছিল ভিয়েতনাম। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশ বেশি পোশাক রপ্তানি করলেও মার্চ থেকে এগিয়ে যায় ভিয়েতনাম। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ভিয়েতনামের চেয়ে ১১২ কোটি ডলারের বেশি তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি করে।

মার্চে বাংলাদেশ ২২৬ কোটি ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি করে, যেখানে একই মাসে ভিয়েতনাম করে ২৩৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি। এপ্রিলে বাংলাদেশ ৩৭ কোটি ডলার আর ভিয়েতনাম করে ১৬১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। আর মে মাসে বাংলাদেশ ১২৩ কোটি ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি করে যেখানে একই মাসে ভিয়েতনাম রপ্তানি করেছে ১৮৬ কোটি ডলারের পোশাক পণ্য।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মতে, বিশ্ব বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের হিস্যা ৬ দশমিক ৮ শতাংশ আর ভিয়েতসামের ৬ দশমিক ২ শতাংশ। আর ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ নিয়ে শীর্ষ অবস্থানে চীন।

দুর্নীতির অভিযোগে কারাদন্ড ফ্রান্সের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির

সংলাপ ॥ দুর্নীতির অভিযোগে ফ্রান্সের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজিকে ৩ বছরের কারাদন্ডের নির্দেশ দিল একটি ফরাসি আদালত। তবে ৩ বছরের মধ্যে ২ বছররে কারাদন্ড মকুব করা হয়েছে। ফলে শারীরিক ভাবে জেলে যেতে হবে না সারকোজিকে।

কী অভিযোগ সারকোজির বিরুদ্ধে? ২০০৭ সালের ভোটের প্রচারের জন্য ল’রিয়েল এর উত্তরাধিকারীর কাছ থেকে বেআইনি অর্থ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল সারকোজির বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত চলাকালীন একটি ফোন নম্বরে আড়ি পাতেন তদন্তকারীরা। তাতেই এই লেনদেনের কথোপকথন ধরা পড়ে। পরে তদন্তে প্রমাণিত হয়, একটি ভুয়ো নামে ওই ফোন নম্বর নথিবদ্ধ করা হয়েছিল। পাশাপাশি তদন্ত চলাকালীন ভিতরের খবর দেওয়ার জন্য এক বিচারপতিকে বড় চাকরির টোপ দেন সারকোজি।

সেই মামলাতেই সোমবার প্যারিসের একটি আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে ৩ বছরের কারাদন্ডের নির্দেশ দেয়। সরকার পক্ষের আইনজীবী চার বছরের কারাদন্ড দাবি করেন। তবে সেই আর্জি টেকেনি। ফ্রান্সের নিয়ম অনুযায়ী ২ বছর বা তার বেশি সাজা হলে কারাবাস বাধ্যতামূলক। তবে তার কম সাজা হলে বাড়িতেও সাজা কাটানো যায়। বিচারপতি সেই সুযোগ দিয়েছেন। সারকোজির আইনজীবীরা সেই আবেদনই করতে চলেছেন বলে খবর।

২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ছিলেন সারকোজি। ২০১২ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও হেরে যান। ২০১২ সালের প্রচারেও বেআইনি ভাবে অতিরিক্ত অর্থ খরচের অভিযোগে একটি মামলা চলছে তাঁর বিরুদ্ধে। আগামী ১৭ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে সেই মামলা।

মুম্বাইয়ের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পিছনে চীনা হ্যাকার!!!

সংলাপ ॥ জল্পনা আগেই ছড়িয়েছিল। এবার মিলল বেসরকারি স্বীকৃতি। সীমান্ত নিয়ে নয়াদিল্লি-বেজিং সংঘাতের আবহে ভারতের পাওয়ার গ্রিডের উপর হামলা চালিয়েছে চীনের একদল হ্যাকার। তাদের সঙ্গে চীনা সরকারেরও যোগাযোগ রয়েছে। এমনই চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট প্রকাশ করল এক মার্কিন সংস্থা। আর তারপরেই গত বছর মুম্বই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। প্রশ্ন, তবে কি গত অক্টোবরে অনলাইনে হানা দিয়েই হ্যাকাররা মুম্বইয়ে অন্ধকার নামিয়ে এনেছিল?

বিভিন্ন দেশের নাগরিক ও সংস্থার ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে গবেষণা চালায় মাসাচুসেটসের ‘রেকর্ডেড ফিউচার’ নামে এক সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা। চীনের সঙ্গে যোগসাজশ থাকা ‘রেডইকো’ নামে এক সংস্থা প্রচার চালাচ্ছিল, ভারতীয় পাওয়ার সেক্টরকে তারা টার্গেট করেছে। রেডইকোর কার্যকলাপ ও সক্রিয়তা নিয়ে সম্প্রতি গবেষণা চালায় রেকর্ডেড ফিউচার। তারা সেই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেখানেই ভারতের পাওয়ার গ্রিডের উপর চীনা হ্যাকার হানার তথ্য উঠে এসেছে।

মার্কিন সংস্থা জানিয়েছে, চীন সরকারের মদতে সে দেশের হ্যাকাররাই ওই বিভ্রাট ঘটিয়েছিল। ২০২০ সালে গলওয়ানে ভারতীয় সেনার সঙ্গে সংঘর্ষের পরই চীনারা ভারতের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থাগুলিকে ম্যালওয়ারের মাধ্যমে অচল করে দেওয়ার চেষ্টা করে। ওই রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে, দেশের প্রায় সর্বত্র বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রগুলির প্রযুক্তিতে ঝাঁকে ঝাঁকে চীনা ম্যালওয়্যার ঢুকতে থাকে। শুধু তা-ই নয়, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন এবং একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রযুক্তিতেও ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়া হয়। যদিও রেকর্ডেড ফিউচার জানিয়েছে, বেশিরভাগ ম্যালওয়ারগুলিই অ্যাক্টিভেটেড হয়নি।

এদিন রিপোর্ট প্রকাশ করে রেকর্ডেড ফিউচার জানিয়েছে, পাওয়ার গ্রিডে চীনা হ্যাকার হানা নিয়ে সরকারিভাবে কিছু বলার আগে ভারত সরকারের বিভাগীয় তদন্ত করা উচিত। কেন্দ্র জানিয়েছে, চীনা হ্যাকার হানার চেষ্টায় কোনও তথ্য লোপাট হয়নি। বিদ্যুৎ মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, গত বছরের ১৯ নভেম্বর সিইআরটি-ইন থেকে একটি ইমেল এসেছিল। সেখানে শ্যাডো প্যাড নামে একটি ম্যালওয়ার হানার কথা বলা হয়েছিল। সেই হানা রুখে দিতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

যদিও ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ সংবাদপত্রে এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশের পর মহারাষ্ট্র সরকার সাইবার হানার বিষয়টি মেনে নিয়েছে। সোমবার রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী নিতিন রাউত বলেন, নিউইয়র্ক টাইমসের দাবি সত্য। আমাদের ৩ সদস্যের একটি দল তদন্ত করে দেখছে। প্রসঙ্গত, গত ১২ অক্টোবর গ্রিড বিপর্যয়ে মুম্বইয়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জেরে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। করোনার জেরে যাঁরা ঘরে বসে কাজ করছিলেন, তাঁরা ব্যাপক সমস্যার মুখে পড়েছিলেন। মুম্বইয়ের পরিবহণ ব্যবস্থা, শিল্প ও শেয়ারবাজারেও ব্যাপক প্রভাব পড়ে। কোভিড রোগীদের ভেন্টিলেটর সক্রিয় রাখতে চালু করতে হয় জেনারেটর। বন্ধ হয়ে যায় কল-কারখানায় উৎপাদন। বিপুল ধস নামে শেয়ারবাজারে। ওইটুকু সময়ের মধ্যেই ঘণ্টায় প্রায় ২৫৮ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছিল বলে খবর। শুরু যায় জোর বিতর্ক। সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব থ্যাকারে। প্রায় দু’ঘণ্টা পর ফিরে এসেছিল বিদ্যুৎ। ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

ডিসেম্বরে মেট্রোরেল চালু করতে চলছে শেষ ধাপের কাজ

সংলাপ ॥ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরেই মেট্রোরেল লাইন-৬ এর একাংশ চালু করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এরই মধ্যে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সেগমেন্ট স্থাপন করা হয়েছে। ফলে দৃশ্যমান হয়েছে উত্তরা থেকে আগারগাঁও মেট্রোরেল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই অংশের কাজ আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এর পরই চালু হবে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। অন্যদিকে প্রকল্পের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে পূর্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৫১ দশমিক ২৬ শতাংশ। মেট্রোরেল লাইন-৬ এর কাজ যখন শুরু হয়েছিল তখনই বলা হয়েছিল, উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের প্রথম মেট্রোরেল লাইন-৬ এর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু পরবর্তীতে সরকার এই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন এনে জানিয়েছিল মেট্রোরেল প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হওয়ার পর ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত একসঙ্গে মেট্রোরেল চালু হবে। সে লক্ষ্যে কাজও চলছিল। কিন্তু প্রায় এক বছর ধরে বিশ্বব্যাপী চলমান কভিড-১৯ মহামারীর কারণে মেট্রোরেল লাইন-৬ এর নির্মাণকাজ অনেকটা থমকে যায়। এর মধ্যেই প্রকল্পের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের কাজ ধীরগতিতে চলতে থাকে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে আবার দ্রুতগতিতে কাজ শুরু হয় উত্তরা-আগারগাঁও অংশে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের তরফে আবারও সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়েছে। সরকার চাচ্ছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরেই মেট্রোরেল প্রকল্পের একাংশ সাধারণের জন্য খুলে দিতে। এ কারণে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের কাজ আগামী ডিসেম্বরের আগেই শেষ করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু যথাযথ সময়ে শেষ হলে আগামী ১৬ ডিসেম্বর এমআরটি লাইন-৬ এর একাংশ খুলে দেওয়া হবে।

এমআরটি লাইন-৬ নির্মাণের জন্য মোট ৮টি প্যাকেজে কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে প্যাকেজ-০১ এর আওতায় ডিপো উন্নয়ন, প্যাকেজ-২ এর আওতায় ডিপো এলাকার পূর্ত কাজ, প্যাকেজ-৩ ও ৪ আওতায় উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৯টি স্টেশন নির্মাণের কাজ হচ্ছে। এ ছাড়া প্যাকেজ-৭ এর আওতায় ইলেকট্রিক্যাল এবং মেকানিক্যাল সিস্টেম সরবরাহ ও নির্মাণকাজ এবং প্যাকেজ-৮ এর আওতায় রোলিং স্টক (রেল কোচ) ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের কাজ অন্যতম।

এমআরটি লাইন-৬ এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্যাকেজ-১ এর কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৯ মাস আগে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি। প্যাকেজ-২ এর আওতায় ডিপো এলাকার পূর্ত কাজের অংশ হিসেবে ডিপোর অভ্যন্তরে ৫২টি অবকাঠামোর মধ্যে ৯টি অবকাঠামোর নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। এই প্যাকেজের আওতায় অন্য কাজগুলোর মধ্যে সব স্থাপনার চারপাশে একই ধরনের সিরামিক টাইলস দিয়ে স্থাপত্যশৈলী নির্মাণ; স্ট্যাবলিং ইয়ার্ডে স্টিলের অবকাঠামো ও রুফ শিটিং; ডিপোর অভ্যন্তরে অবস্থিত ভবনসমূহের পূর্ত মেকানিক্যাল এবং বৈদ্যুতিক কাজ; ডিপোর অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার সব পর্যায়ের লাইন নির্মাণ; কেন্দ্রীয় ওয়্যার হাউসের স্টিলের অবকাঠামো ও রুফ শিটিং এবং ইটিপি ও এসটিপির নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। ডিপো এলাকার পূর্ত কাজের অগ্রগতি হচ্ছে ৮০ শতাংশ। প্যাকেজ-৩ ও ৪ আওতায় উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৯টি স্টেশন নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। এ দুই প্যাকেজের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালের ১ আগস্ট। এরই মধ্যে ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের মধ্যে ১১ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট দৃশ্যমান হয়েছে। ৯টি স্টেশনের সাব-স্ট্রাকচার নির্মাণ শেষ হয়েছে। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ ও পল্লবী স্টেশনের ছাদ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া স্টেশনের ছাদ নির্মাণের কাজ চলছে। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের প্ল্যাটফরমের স্ট্রিল-স্ট্রাকচার নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। পল্লবী স্টেশনের প্ল্যাটফরমের স্টিল-স্ট্রাকচার নির্মাণের কাজও শেষ পর্যায়ে। বর্তমানে মিরপুর-১১, কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া স্টেশনের শেষ হওয়া ছাদের ওপর প্ল্যাটফরম স্টিল-স্ট্রাকচার নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ ও পল্লবী স্টেশনের মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল ও প্ল্যাম্বিংয়ের কাজ চলছে। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ ও পল্লবী স্টেশনে বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন এবং স্টেশন কন্ট্রোলার কক্ষ নির্মাণের কাজ চলছে। এসব কাজের সার্বিক অগ্রগতি হচ্ছে ৭৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। প্রকল্পের প্যাকেজ-৭ এর আওতায় এরই মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম সরবরাহ ও নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ৫৮ দশমিক ৭০ শতাংশের। আর প্যাকেজ-৮ এর আওতায় রেল কোচ ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে জাপানে যাত্রীবাহী কোচ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। চলমান করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারী পরিস্থিতিতে বিশেষ উদ্যোগে থার্ড পার্টি ইন্সপেকশনের মাধ্যমে মেট্রো ট্রেন সেট বাংলাদেশে নিয়ে আসা হচ্ছে। আগামী এপ্রিল মাসের তৃতীয় সপ্তাহে মেট্রো ট্রেনের প্রথম চালান বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় চালানটি যথাক্রমে আগামী জুন মাসের মাঝামাঝি ও আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাংলদেশে পৌঁছার কথা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম ট্রেন সেট নিয়ে আসা হবে। প্রকল্পের অষ্টম প্যাকেজের অগ্রগতি হচ্ছে ৩৭ শতাংশ।

লিবিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার করেনি তুরস্ক ও রাশিয়া

সংলাপ ॥ লিবিয়ায় মোতায়েন বিদেশি সেনারা জাতিসংঘের নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী দেশটি ত্যাগ করেনি। তিন মাস আগে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় লিবিয়ার সংঘর্ষরত পক্ষগুলোর মধ্যে যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয় তাতে বলা হয়েছিল, লিবিয়ায় মোতায়েন সব বিদেশি সেনা ২৩ জানুয়ারি শনিবারের মধ্যে দেশটি ত্যাগ করবে।

কিন্তু বেধে দেয়া সময় পর্যন্ত কোনো দেশ তার সেনা প্রত্যাহার করেনি। লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে মোতায়েন সরকার আন্তর্জাতিক সমর্থনপুষ্ট এবং তুরস্কও ত্রিপোলি সরকারকে সমর্থন করছে। অন্যদিকে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চল নিয়ন্ত্রণকারী জেনারেল হাফতার বাহিনীকে সমর্থন দিচ্ছে রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশর।

স্যাটেলাইট থেকে ধারণ করা ছবি ও ভিডিও ক্লিপ প্রচার করে সিএনএন জানিয়েছে, লিবিয়ার সির্ত শহরের কাছে বহু কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় ‘রাশিয়ার সেনা’ মোতায়েন রয়েছে। দৃশ্যত লিবিয়ায় যেকোনো সমঝোতা থেকে নিজেদের স্বার্থ আদায় করে নেয়ার জন্য রাশিয়া ও তুরস্ক তাদের সেনা মোতায়েন রাখতে চায়।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গত সপ্তাহে বলেছিলেন, লিবিয়া থেকে সেনা সরানোর ব্যাপারে গত ২৩ অক্টোবর যে সমঝোতা হয়েছিল সব আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাহিনীর উচিত তা বাস্তবায়ন করা। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, লিবিয়ার দুই পক্ষের সমর্থনে দেশটিতে প্রায় ২০ হাজার বিদেশি সেনা মোতায়েন রয়েছে।

প্রতিবছর ২৫ শতাংশ হারে গবাদিপশুর খামার বাড়ছে

সংলাপ ॥ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। স্বয়ংসম্পূর্ণ হবার পথে প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে কৃষিপণ্যে বাংলাদেশ সাফল্যেও ধারাবাহিকতা ধরে রাখছে। গবাদিপশুর খামার একটি অন্যতম কৃষিখাত। ছোট-বড় মিলিয়ে এখন খামারের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। তিন বছরে দেশে গরু-ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২০ লাখ। সংকট থেকে যে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হতে পারে, তার বড় উদাহরণ বাংলাদেশের গবাদি পশু খাত। চার বছর আগেও দেশের চাহিদার বড় অংশ মিটত প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে আমদানি করে। ২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধ করে দেয়। এতেই বাজারের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশে গবাদিপশুর লালনপালন ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। গরু ও ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ।

শুধু কোরবানি ঈদের আগে দেশে ২০ থেকে ২২ লাখ গরু-ছাগল বৈধ-অবৈধ পথে বাংলাদেশে আসত। সারা বছরে এই সংখ্যা ৩০ লাখে ছুঁয়ে যেত। ভারত থেকে গবাদিপশু আসা বন্ধ হওয়ার পর দেশে প্রতিবছর ২৫ শতাংশ হারে গবাদিপশুর খামার বাড়ছে। ছোটবড় মিলিয়ে এখন খামারের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। গত তিন বছরে দেশে গরু-ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২০ লাখ। পাশাপাশি মহিষের উৎপাদনও ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। চার বছর আগেও শুধু কোরবানির ঈদের সময় প্রায় ২২ লাখ গরু-ছাগল ভারত ও মিয়ানমার থেকে এসেছিল। গত ঈদে এসেছিল মাত্র দেড় লাখ। গত তিন বছরে চিত্র এমনই পাল্টেছে যে গত কোরবানির ঈদের হাটে প্রায় ১২ লাখ গরু-ছাগল অবিক্রীত ছিল।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেখতে পেয়েছি, গবাদিপশু পালনে দ্রুত দারিদ্র্য বিমোচন হয়। একই সঙ্গে দেশের মাংসের চাহিদা মেটে, বিদেশি মুদ্রার সাশ্রয় হয়। ফলে গবাদিপশুর সংখ্যা বৃদ্ধি সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি, বিশেষত গ্রামীণ অর্থনীতিকে বদলে দিচ্ছে।’

গরু-ছাগলের উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে স্বাভাবিকভাবে এ খাতে বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থানেরও উন্নতি হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছাগলের সংখ্যা, মাংস ও দুধ উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ বৈশ্বিক সূচকে ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে। এই খাতে শীর্ষে রয়েছে ভারত ও চীন। বাংলাদেশ ছাগলের দুধ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়। আর ছাগলের সংখ্যা ও মাংস উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ। সামগ্রিকভাবে ছাগল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশ হচ্ছে ভারত ও চীন। আর গরু-ছাগল-মহিষ-ভেড়া মিলিয়ে গবাদিপশু উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের ১২তম।

সুপ্রভাত বাংলাদেশ

একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না
মুজিববর্ষে এটাই বড় উৎসব: শেখ হাসিনা

সংলাপ ॥ সুপ্রভাত আসছে। বাঙালি সুপ্রভাতের আলো দেখতে পাচ্ছে। আলো ফুটবেই যদি এমন করে আধার কাটিয়ে উঠার পথ দেখানোর আর কর্ম সাধনের নেতা থাকে। সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারের প্রশ্নে এতদিন যে আধার ছিল তা যেন কাটতে শুরু করেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না, মুজিববর্ষে এটাই সবচেয়ে বড় উৎসব।’ সম্প্রতি তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের প্রায় ৭০ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে সরকারের পক্ষ হতে জমি ও ঘর প্রদান করছেন।  শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমার অত্যন্ত আনন্দের দিন। ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর প্রদান করতে পারা বড় আনন্দের। আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের কথাই ভাবতেন। আমাদের পরিবারের লোকদের চেয়ে তিনি গরীব অসহায় মানুষদের নিয়ে বেশি ভাবতেন এবং কাজ করেছেন। এ গৃহ প্রদান কার্যক্রম তারই শুরু করা।’

মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় প্রায় ৯ লাখ মানুষকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পাকাবাড়ি উপহার দেওয়া হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে ঘর পেলো দেশের ৪৯২টি উপজেলার ৬৯ হাজার ৯০৪ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার। আগামী মাসে আরও ১ লাখ পরিবার বাড়ি পাবে। অনুষ্ঠানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের তৈরি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। এ সময় লাইভে সংযুক্ত ছিল-খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা, চাপাইনবাবগঞ্জ সদর, নীলফামারীর সৈয়দপুর ও হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা প্রশাসন। পাশাপাশি, দেশের সব উপজেলাই অনলাইনে এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীতে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি পরিবারের তালিকা করে তাদের বাড়ি করে দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। ছয় মাসেরও কম সময়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হলো। দ্বিতীয় ধাপে আরও প্রায় এক লাখ পরিবারকে বাড়ি উপহার হিসেবে দেওয়া হবে। শুধু বাড়িই নয়, প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানিরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি এই পরিবারগুলোর কর্মসংস্থানেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে এই ঘরগুলো দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ৪১৯ কোটি ৬০ লাখ টাকায় তৈরি করা হয়েছে ২৪ হাজার ৫৩৮টি বাড়ি। দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ সহনশীল বাড়ি নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৬৫৯ কোটি ৮২ লাখ টাকায় ৩৮ হাজার ৫৮৬টি বাড়ি এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের আওতায় ৫২ কোটি ৪১ লাখ টাকায় ৩ হাজার ৬৫টি বাড়ি নির্মিত হচ্ছে। প্রকল্পগুলোতে মোট ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ১৬৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আবাসন সুবিধার আওতায় আনার জন্য সরকারি কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে আরো এক লাখ বাড়ি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আবাসন সুবিধার আওতায় আনার জন্য কাজ করছেন। গৃহ ও ভূমিহীন মানুষের মাঝে হস্তান্তরের জন্য সরকার বিশ্বে প্রথমবারের মতো ৬৬ হাজার ১৮৯টি বাড়ি নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেছে। ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নোয়াখালী জেলার (বর্তমানে লক্ষ্মীপুর) চরপোরাগাছা গ্রাম পরিদর্শনকালে ভূমিহীন, গৃহহীন ও অসহায় লোকদের পুনর্বাসনের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও দেশের জন্য কল্যাণমুখী ও উন্নয়ন কর্মসূচি শুরু করেন।’

সরকার মুজিব বর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের জন্য এক হাজার ১৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৬ হাজার ১৮৯টি বাড়ি নির্মাণ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অধীন আশ্রয়ন প্রকল্প মুজিব বর্ষ উদযাপনকালে ২১টি জেলায় ৩৬টি উপজেলায় ৪৪টি প্রকল্পের অধীনে ৭৪৩টি ব্যারাক নির্মাণ করে তিন হাজার ৭১৫টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করছে। ড. কায়কাউস আরো বলেন, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প চার হাজার ৮৪০.২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে (জুলাই ২০১০ থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত) দুই লাখ ৫০ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার ও ছিন্নমূল পরিবারকে পুনর্বাসিত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সারা দেশে এক লাখ ৯২ হাজার ২২৭টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে এরই মধ্যে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট ৪৮ হাজার ৫০০ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আশ্রয়ন-২-এর প্রকল্প পরিচালক মো. মাহাবুব হোসেন বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প ২০২০ সালে আট লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি পরিবারের তালিকা তৈরি করে। তাদের মধ্যে দুই লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার এবং পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ২৬১টি পরিবারের এক থেকে ১০ শতাংশ ভূমি রয়েছে। তবে তাদের বসবাসের বাড়ি নেই। আশ্রয়ণ প্রকল্প ১৯৯৭ সালে থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন লাখ ২০ হাজার ৫৮টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসিত করেছে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোর জন্য ব্যারাক নির্মাণ করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উদ্বাস্তু কক্সবাজারের খুরুশকুলে ৬০০ পরিবারের জন্য ২০টি পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করেছে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ডিটেইল্ড প্রজেক্ট প্রপোজালের (ডিপিপি) মাধ্যমে আরো ১১৯টি বহুতল ভবন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকন্ড বাস্তবায়ন করছে।

পুনর্বাসিত পরিবারগুলোর সদস্যদের আয় সংস্থানমূলক কাজে সম্পৃক্ত হতে সক্ষম করে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি, দক্ষতা অর্জন এবং মানব সম্পদ উন্নয়নের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

ভিশন-২০২১ বাস্তবায়ন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এসডিজি) অর্জনের জন্য দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ভবিষ্যতে প্রকল্প কর্মকন্ড ত্বরান্বিত করা হবে।

বিশ্বের বৃহত্তম রিজার্ভ ফোর্স এখন বাংলাদেশে

সংলাপ ॥ রিজার্ভ আর্মি, রিজার্ভ সোলজার অথবা রিজার্ভ ফোর্স বা নিয়মিত বাহিনী বলতে একটি দেশের সেসব সৈন্যদের বোঝায় যারা তাদের সিভিলিয়ান লাইফের পাশাপাশি মিলিটারিতেও দায়িত্ব পালন করে। রিজার্ভ ফোর্সের সদস্যদের সশস্ত্র সৈনিকদের মতই ট্রেনিং দেয়া হয়। প্রথমে তারা বেসিক কমব্যাট ট্রেনিং (BCT) ও পরে এডভান্সড ইন্ডিভিউজুয়াল ট্রেনিং (AIT) কোর্স সম্পন্ন করে, তারপর এরা যে যার মতো বেসামরিক কর্মজীবনে ফিরে যায়। কিন্তু তাদের সশস্ত্র বাহিনীর মতো অস্ত্র বহনের সুযোগ দেয়া হয় না। রিজার্ভ সৈন্যদের যুদ্ধের স্কিল ধরে রাখার জন্য মাসে একদিন এবং বছরে অন্তত দুই সপ্তাহ বাধ্যতামূলক ট্রেনিং নিতে হয়, যাতে করে তারা তাদের স্কিল গুলো ধরে রাখতে পারে। তবে রিজার্ভ ফোর্স আবার মিলিটারির রিজার্ভ ফরমেশন থেকে আলাদা, কারণ রিজার্ভ ফোর্সকে মিলিটারি কমান্ডাররা যুদ্ধে ডেপ্লয় করতে পারে না কেবল প্রতিকূল পরিস্থিতিতে, জাতীয় নিরাপত্তা হুমকিতে পড়লে অথবা জরুরী অবস্থায় সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত ম্যানপাওয়ারের প্রয়োজন হলে তখন এদের ব্যবহার করা হয়। অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও রিজার্ভ ফোর্সের অংশ।

এদের স্থায়ী সদস্যদের অংশ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। রিজার্ভ ফোর্সের আরেকটা সুবিধা হলো পিস টাইমে সেনাবাহিনীতে সদস্য নিয়োগ দিয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হয় না, ফলে দেশের সামরিক ব্যয় অনেক কমে আসে এবং সে অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করা যায়। এটিকে সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ দেয়ার সবচেয়ে পুরাতন পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কারণ প্রাচীনকালে নিয়মিত বাহিনী বলতে কিছু ছিলো না।

বর্তমানে বাংলাদেশের পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় রিজার্ভ ফোর্স রয়েছে। এদের বেশিরভাগই বাংলাদেশ আনসার বাহিনীর সদস্য। যার সংখ্যা প্রায় ৬৮,৪০,০০০ জন। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভিয়েতনাম, যাদের রিজার্ভ ফোর্স  প্রায় ৫০,০০,০০০ ! সাম্প্রতিক সময়ে ভারতো রিজার্ভ ফোর্স বাড়ানোর জন্য TOUR OF DUTY প্রোগ্রাম শুরু করেছে।