১৪২৮ : সত্যানুসন্ধানী হয়ে দেশ গড়ার সময়

সংলাপ ॥ ঐতিহাসিক যাত্রাটা অবশ্য সহজ ছিল না এবং এখনও নয়। আদর্শের প্রতি আনুগত্য অনুরাগ রেখেই বাংলার মানুষ দেশকে সত্যিকার অর্থে মহান করে গড়ে তুলতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বাঙালির এই দৃঢ়তাবলেই দেশ গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বশক্তির কাতারে উঠবে। আদর্শের প্রতি আনুগত্য অনুরাগ রেখেই নতুন প্রজন্মও দেশকে সত্যিকার অর্থে মহান করে গড়ে তুলতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই দৃঢ়তাবলেই দেশ গুরুত্বপূর্ণ উর্দ্ধমুখী হয়ে উঠছে এবং উঠবে।  তিনি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি বিরাট উচ্চতার এক রাজনৈতিক নেতা, প্রাজ্ঞ সংসদ সদস্য ও প্রকৃত জাতীয়তাবাদী। তাঁর একটাই লক্ষ্য স্থির যে, শুধু দেশের জন্যই কাজ করবেন। কেমন হবে সেই দেশ? সেই দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া চালিত হবে অবশ্যই এক সুন্দর ও নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে। গড়ে উঠছে উন্নয়নের নানাবিধ মডেল। গরিব মানুষ, বঞ্চিত নরনারী ও শ্রমিক-কৃষকদের জন্য চলছে অনেক সামাজিক প্রকল্প। অনবদ্য প্রশাসন উপহার দেয়া না হলেও এই সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তিগত উন্নয়নকে হাতিয়ার করে, পরিকাঠামোর বিকাশ ঘটিয়ে আর উপযুক্ত ক্ষেত্রগুলোতে পর্যাপ্ত লগ্নির মাধ্যমে।

দল পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনবদ্য ভূমিকার কথাও আজ উল্লেখ করার সময় এসেছে। এই কঠোর পরিশ্রমী নেত্রীর সাংগঠনিক দক্ষতা প্রশ্নাতীত। তাঁর যে দূরদৃষ্টি তা খুব কম রাজনীতিকদের মধ্যে দেখা যায়। তৃণমূল স্তরের কর্মীদেরও তিনি উপযুক্ত মর্যাদা দিতে জানেন। বোঝেন, সংগঠনে তাদের এবং নতুন প্রজন্মের অনস্বীকার্য গুরুত্ব। আজ দেশের সব কোণে বিরাটভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে, উত্তরণ হয়েছে দেশের বৃহত্তম পার্টিতে, এর পিছনে তাঁর অবদান অপরিমেয়। তাঁর অনবদ্য পরিকল্পনা, কৌশল এবং সেসবের নিখুঁত রূপায়ণ ছাড়া দল এই উচ্চতায় পৌঁছনোর কথা ভাবতেই পারতো না।

আজকের আওয়ামীলীগ শুধু বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শগুলোকে আর আঁকড়ে ধরে নেই বরং সংবিধানে জিয়ার বিসমিল্লাহ, জামায়াত ও ধর্মাশ্রয়ী দলগুলোর সাংবিধানিক বৈধতা প্রদান, হেফাজতে ইসলামের সাথে সমঝোতা, এরশাদের রাষ্ট্রধর্ম-এর সাংবিধানিকীকরণ, ধর্মীয় ও সংখ্যালঘু শ্রেণীদের ওপর পরিচালিত নির্যাতনে চোখ উল্টানো, নেপথ্যে দ্বিচারী ভূমিকা পালন এবং সব অঙ্গনে অনেক অপরাধীদের বিচারামলে না আনা প্রভৃতির মাধ্যমে আজকের সরকার নীতি-আদর্শের কোন অবস্থানে বর্তমান তা নিয়ে গবেষণার দাবী রাখে। বিচ্যুতিতে নিপতিত হওয়ার পথে চললে নিকট অতীতের বিএনপি-র জোট সরকারের সাথে তার মৌলিক আদর্শগত গরমিল অন্তর্হিত হয়ে যাবে।

ষ্পষ্টতই বলা যায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন লড়াইটা আদর্শিক দ্বন্দ্ব বা মতানৈক্যের কারণে নয়, তা পুরোদস্তুর ক্ষমতায় থাকা ও ক্ষমতায় যাওয়াকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হচ্ছে। কোন আদর্শের বাস্তবায়নের জন্য নয়। বিএনপি এবং বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি  কখনো বিসমিল্লাহ্ প্রশ্নে, জামায়াতে ইসলামী ও ধর্মাশ্রয়ী অপরাপর দলকে বৈধতা দেয়ার প্রশ্নে, রাষ্ট্রধর্মের প্রশ্নে বা সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার না হওয়ার প্রশ্নে সরকারের বিন্দুমাত্র সমালোচনা কি গণমাধ্যমে, কি রাজপথে – কোথাও করেনি।

এ-দেশের বহুত্ববাদের বৈচিত্রকে একটা অখ- ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের কার্পেটের নীচে লুকিয়ে রাখা যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা নয়, সেটা রাজনৈতিক নেতারা এখনও বুঝতে পারছেন কি? গোটা দেশের উপর অধিকার অর্জনের বাসনা কোন দলের নেতাদের হতেই পারে, সে তো সেই মুঘল আমলে সম্রাট আওরঙ্গজেবও দিল্লিতে বসে করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। মুঘল সা¤্রাজ্যের পতনের অন্যতম কারণ বলা হয় তাঁর অবাস্তবমুখী নীতি। বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের মাটিতে আদর্শিক লক্ষ্য বাস্তবায়নে, বিভিন্নতার জোটের সঙ্গে আপসকামী টেকসই গণতন্ত্র, দেশ উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে এবং আরো দু-এক যুগ রাখতে পারে।

যুগে যগে বাংলাদেশের বুকে এমন কিছু ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং আছেন, যাঁরা বাঙালি জাতির  কাছে নমস্য এবং যাঁদের দেশ ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, কথা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, জাতপাতের বিচার না করা – ইত্যাদি গুণাবলী আজও সাধারণ মানুষকে বাঁচার প্রেরণা জোগায়। এমনই এক আধার হয়ে বাঙালি জাতির মধ্যে বর্তমান, বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক উত্তরসুরী শেখ হাসিনা। ইচ্ছাশক্তি আর রাজনৈতিক সাধনার বলে বলীয়ান হয়ে তিনি সাধারণ থেকে হয়ে উঠেছেন দেশনেত্রী। হয়ে উঠেছেন সমাজ পরিবর্তনের পথিকৃৎ। সত্যেরই প্রতিফলন। তিনি কর্ম, দেশভক্তি ও বাঙালিত্ব যোগের এক পবিত্র সমন্বয়। মানুষের সেবায়, তাদের কষ্টে-দুঃখে, দুর্দশায় তাদের পাশে সবসময় দাঁড়িয়েছেন তিনি। তাঁর অভয়বাণী সাধারণের মাঝে আনে জোরের জোয়ার। তাঁর আশীর্বাদ ও উপদেশে মানুষ হয়েছে বিপন্মুক্ত। জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে তিনি মানুষকে ভালোবাসতে শিখিয়ে চলছেন। বাংলার মানুষের মঙ্গলচিন্তায় নিজেকে সঁপে দিয়েছেন। আদায় করে নিয়েছেন এক সর্বজনীন ভালোবাসা, শ্রদ্ধা। আর তাই তিনি হয়ে উঠেছেন রাজনৈতিক যুগাবতার।