সুপ্রভাত বাংলাদেশ

একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না
মুজিববর্ষে এটাই বড় উৎসব: শেখ হাসিনা

সংলাপ ॥ সুপ্রভাত আসছে। বাঙালি সুপ্রভাতের আলো দেখতে পাচ্ছে। আলো ফুটবেই যদি এমন করে আধার কাটিয়ে উঠার পথ দেখানোর আর কর্ম সাধনের নেতা থাকে। সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারের প্রশ্নে এতদিন যে আধার ছিল তা যেন কাটতে শুরু করেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না, মুজিববর্ষে এটাই সবচেয়ে বড় উৎসব।’ সম্প্রতি তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের প্রায় ৭০ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে সরকারের পক্ষ হতে জমি ও ঘর প্রদান করছেন।  শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমার অত্যন্ত আনন্দের দিন। ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর প্রদান করতে পারা বড় আনন্দের। আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের কথাই ভাবতেন। আমাদের পরিবারের লোকদের চেয়ে তিনি গরীব অসহায় মানুষদের নিয়ে বেশি ভাবতেন এবং কাজ করেছেন। এ গৃহ প্রদান কার্যক্রম তারই শুরু করা।’

মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় প্রায় ৯ লাখ মানুষকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পাকাবাড়ি উপহার দেওয়া হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে ঘর পেলো দেশের ৪৯২টি উপজেলার ৬৯ হাজার ৯০৪ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার। আগামী মাসে আরও ১ লাখ পরিবার বাড়ি পাবে। অনুষ্ঠানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের তৈরি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। এ সময় লাইভে সংযুক্ত ছিল-খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা, চাপাইনবাবগঞ্জ সদর, নীলফামারীর সৈয়দপুর ও হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা প্রশাসন। পাশাপাশি, দেশের সব উপজেলাই অনলাইনে এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীতে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি পরিবারের তালিকা করে তাদের বাড়ি করে দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। ছয় মাসেরও কম সময়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হলো। দ্বিতীয় ধাপে আরও প্রায় এক লাখ পরিবারকে বাড়ি উপহার হিসেবে দেওয়া হবে। শুধু বাড়িই নয়, প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানিরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি এই পরিবারগুলোর কর্মসংস্থানেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে এই ঘরগুলো দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ৪১৯ কোটি ৬০ লাখ টাকায় তৈরি করা হয়েছে ২৪ হাজার ৫৩৮টি বাড়ি। দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ সহনশীল বাড়ি নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৬৫৯ কোটি ৮২ লাখ টাকায় ৩৮ হাজার ৫৮৬টি বাড়ি এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের আওতায় ৫২ কোটি ৪১ লাখ টাকায় ৩ হাজার ৬৫টি বাড়ি নির্মিত হচ্ছে। প্রকল্পগুলোতে মোট ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ১৬৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আবাসন সুবিধার আওতায় আনার জন্য সরকারি কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে আরো এক লাখ বাড়ি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আবাসন সুবিধার আওতায় আনার জন্য কাজ করছেন। গৃহ ও ভূমিহীন মানুষের মাঝে হস্তান্তরের জন্য সরকার বিশ্বে প্রথমবারের মতো ৬৬ হাজার ১৮৯টি বাড়ি নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেছে। ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নোয়াখালী জেলার (বর্তমানে লক্ষ্মীপুর) চরপোরাগাছা গ্রাম পরিদর্শনকালে ভূমিহীন, গৃহহীন ও অসহায় লোকদের পুনর্বাসনের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও দেশের জন্য কল্যাণমুখী ও উন্নয়ন কর্মসূচি শুরু করেন।’

সরকার মুজিব বর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের জন্য এক হাজার ১৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৬ হাজার ১৮৯টি বাড়ি নির্মাণ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অধীন আশ্রয়ন প্রকল্প মুজিব বর্ষ উদযাপনকালে ২১টি জেলায় ৩৬টি উপজেলায় ৪৪টি প্রকল্পের অধীনে ৭৪৩টি ব্যারাক নির্মাণ করে তিন হাজার ৭১৫টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করছে। ড. কায়কাউস আরো বলেন, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প চার হাজার ৮৪০.২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে (জুলাই ২০১০ থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত) দুই লাখ ৫০ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার ও ছিন্নমূল পরিবারকে পুনর্বাসিত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সারা দেশে এক লাখ ৯২ হাজার ২২৭টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে এরই মধ্যে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট ৪৮ হাজার ৫০০ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আশ্রয়ন-২-এর প্রকল্প পরিচালক মো. মাহাবুব হোসেন বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প ২০২০ সালে আট লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি পরিবারের তালিকা তৈরি করে। তাদের মধ্যে দুই লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার এবং পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ২৬১টি পরিবারের এক থেকে ১০ শতাংশ ভূমি রয়েছে। তবে তাদের বসবাসের বাড়ি নেই। আশ্রয়ণ প্রকল্প ১৯৯৭ সালে থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন লাখ ২০ হাজার ৫৮টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসিত করেছে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোর জন্য ব্যারাক নির্মাণ করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উদ্বাস্তু কক্সবাজারের খুরুশকুলে ৬০০ পরিবারের জন্য ২০টি পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করেছে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ডিটেইল্ড প্রজেক্ট প্রপোজালের (ডিপিপি) মাধ্যমে আরো ১১৯টি বহুতল ভবন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকন্ড বাস্তবায়ন করছে।

পুনর্বাসিত পরিবারগুলোর সদস্যদের আয় সংস্থানমূলক কাজে সম্পৃক্ত হতে সক্ষম করে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি, দক্ষতা অর্জন এবং মানব সম্পদ উন্নয়নের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

ভিশন-২০২১ বাস্তবায়ন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ (এসডিজি) অর্জনের জন্য দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ভবিষ্যতে প্রকল্প কর্মকন্ড ত্বরান্বিত করা হবে।