শান্তির জন্য ‘সূফী ইসলাম’ ডাক দিয়ে যায়

শাহ্ ফুয়াদ ॥ অসংখ্য সূফী সাধক-অলি-আউলিয়া-দরবেশের পূণ্য কর্মে এদেশে শান্তির বার্তা হিসেবে এসেছিল ইসলাম ধর্ম। কিন্তু ইসলাম নিয়ে এ বাংলায় রাজনীতি নতুন নয়। ১৯৭১ সালের এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় মানুষ দেখেছিল ধর্মের নামে কী জঘন্য কাজ করেছিল এদেশেই জন্ম নেয়া পাপীষ্ঠ কিছু কিছু মানুষ। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে সেদিন ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা, নারী নির্যাতন, নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করেছিল ধর্মব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলার অবকাশ এ লেখায় নেই। সংক্ষেপে বলতে গেলে ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্টের পর ক্ষমতায় জুড়ে বসা পাকিস্তানী শাসকচক্র তাদের রাজনৈতিক তথা কায়েমী স্বার্থে ইসলাম ধর্মকে ব্যবহারের মোক্ষম সুযোগ পেয়ে বসে এবং এর অপব্যবহার করতে থাকে। সদ্য জন্মলাভকারী পাকিস্তান রাষ্ট্র কায়েমী স্বার্থে ব্যবহারের উর্বর ক্ষেত্র হয়ে উঠে এই পবিত্র ইসলাম ধর্ম । এই ধর্মব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষক ও আশ্রয়দাতা পাকিস্তানী শাসকচক্র ছিলো একে অপরের পরিপূরক।

বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও দেশবাসী যখন আজ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে তখন পাকিস্তানী শাসনামলের সেই দিনগুলো কীভাবে মূল্যায়ন বা উপলব্ধি করবে বা করতে পারছে নতুন প্রজন্ম তা হয়তো গবেষণার বিষয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, সেই ঘৃণ্য ধর্মব্যবসায়ীরা এখনো সমাজের সব স্তরের মানুষকে মিথ্যার বেড়াজালে আটকে রেখে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি উদ্ধার করে আরাম-আয়েশ করে যাচ্ছে। অতি সম্প্রতি ঢাকার বাইতুল মোকাররাম মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও সরাইলে এবং চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে যেভাবে রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন অফিসে অগ্নিসংযোগ করেছে তা ধর্মব্যবসায়ীদের ১৯৭১’এর ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডেরই নতুন রূপ। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের বিলাসবহুল রিসোর্টে অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত তথাকথিত হেফাজত নেতাকে জনতার হাতে হাতেনাতে আটককে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃস্টি হলো। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, হেফাজত নেতার প্রতি একশ্রেণীর মানুষের অন্ধভক্তির কারণে তাদের বিশ্বাসই হচ্ছে না যে, তাদের নেতা এমন কাজ করতে পারে। ধর্মভীরুতা থেকে ধর্মান্ধতার রূপ কেমন হতে পারে, মিথ্যাচারে এরা কতটুকু পারঙ্গমতা, দক্ষতা অর্জন করেছে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী ও মানুষের প্রতিক্রিয়া এর একটি উদাহরণ মাত্র।

 অথচ ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলেরও বহু  আগে এদেশের মানুষ শত শত বছর ধরে যার যার ধর্ম পালন করে এসেছে যা ছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ এবং তা ঐতিহাসিকভাবে সত্য। এই বাংলায় স্বাধীন সুলতানী আমলের প্রায় দুই শ’ বছর (১৩৩৮-১৫৩২) মুসলিম সুলতানগণ ক্ষমতায় ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁরা সব ধর্মের মানুষের প্রতি ছিলেন সহনশীল। এক্ষেত্রে সুলতান ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ্ (১৩৩৮-১৩৪২), আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ (১৪৯২-১৫১৯), নূসরত শাহ্, গিয়াসউদ্দিন আযম শাহের (১৫১৯-১৫৩২) নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এঁদের সময়ে বাংলার মান-মর্যাদা- গৌরব উচ্চ শিখরে উঠেছিল যা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। এই সুলতানগণ সুফী-দরবেশ-আউলিয়াদেরকে অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখতেন এবং তাঁরা বিভিন্ন স্থানে সূফীদের জন্য দরবার শরীফ-খানকা শরীফ প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন, পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। আলাউদ্দিন হোসেন শাহের সময় শ্রীচৈতন্য বাংলায় বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার করেছিলেন। সূফী-দরবেশদের প্রতি সুলতানের সম্মানবোধ ও আচরণ শ্রীচৈতন্যকে তাঁর ধর্ম প্রচারে উদ্বুদ্ধ করেছিলো বলে বাউল ধর্মমতাবলম্বী অনেকে মত ব্যক্ত করে থাকেন। ন্যায়বিচারক সুলতান হিসেবে সমধিক খ্যাতির অধিকারী গিয়াসউদ্দিন আযম শাহের মাজার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে আজও বর্তমান। মূলত বাংলাদেশের মানুষের অসাম্প্রদায়িক চেতনার শক্তভিত্তিটা সুলতানী আমলেই তৈরি হয়েছিল।   

বাংলায় সূফী-দরবেশদের প্রচারিত ধর্মের মূলে ছিল মানবতাবাদ। ফলে অন্যান্য ধর্ম বিশেষ করে হিন্দু ধর্মের জাতি-ভেদের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা পেতে নি¤œ বর্ণের নিষ্পেষিত মানুষেরা ইসলামের সুশীতল ছায়ায় স্থান করে নিয়েছিল। তবে সূফীদের ইসলামের যাত্রাপথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ইংরেজ শাসন। কারণ, ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ করেছিল এদেশের ফকীর-দরবেশ-সন্নাসীরাই। এঁদেরই প্রধান ফকির ফজনু শাহ নামটি ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। ইংরেজ শাসন পাকাপোক্ত হওয়ার পর প্রথম ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ও পরে সরাসরি ব্রিটিশ সরকার কোলকাতা ও ঢাকায় আলিয়া মাদ্রাসার মতো অসংখ্য মাদ্রাসা ভারবর্ষে  প্রতিষ্ঠা করে তাদেরই মতো করে ইসলামের ব্যাখ্যা দেয়া শুরু করে এবং অসংখ্য মৌলভী তৈরি করে সর্বত্র প্রেরণ করে। ইসলাম ধর্মীয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ (ফতোয়া) তখন থেকেই ইংরেজ শাসকদের অনুকূলে যেতে শুরু করে। ফলে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে কোনো মোল্লা-মৌলভী কথা বলেছেন এমন ঘটনা পাওয়া যায় না। এরই ধারাবাহিকতায় দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে সৃস্টি হয় পাকিস্তান ও ভারত নামের দুটো রাষ্ট্র। পাকিস্তান রাষ্ট্রেও একই দৃশ্যপট-বরং আরও শক্তিশালী হয়ে এই ধর্মব্যবসায়ীরা বিশেষ করে পূর্ববাংলার জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। ৭১’এর মুক্তিযুদ্ধে রাজাকার-আলবদর-আলশাম্স এবং পাকিস্তানী হানাদারদের নৃশংসতাই এর প্রমাণ। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পূর্ব বাংলার জনগণের ওপর শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ণ, নির্যাতন, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে তৎকালীন আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ-প্রতিরোধকে ব্যর্থ করে দিতে পাকিস্তানীরা ইসলাম ধর্ম এবং এর নবীজীকে কীভাবে ব্যবহার করতো তার তার একটি উদাহরণ তুলে ধরে হলো। মহাকালের অগ্নিপুরুষ সূধী সাধক মওলানা ভাসানী তখন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক (জেনারেল সেক্রেটারি)। পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ যেদিন ‘প্রতিরোধ দিবসে’র ডাক দিলো সেদিনটিতে সরকারের মদদপুস্ট হয়ে একটি গ্রুপ ভারতের কাশ্মীরে নবীজির অবমাননা হয়েছে বলে অন্য কর্মসূচি নিয়ে আসলো। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর দেয়া বিবৃতিতে (দৈনিক আজাদে ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬ সালে প্রকাশিত) ঘটনাটি ‘ প্রতিরোধ দিবস প্রসঙ্গ জনাব মুজিবর রহমান কর্ত্তৃক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা ’ শিরোনামের খবরে ঘটনাটি ফুটে উঠেছে এভাবে-“করাচী, ১লা ফেব্রুয়ারী।- পূর্ব্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারী শেখ মুজিবর রহমান এম, সি, এ অদ্য নিম্নোক্ত বিবৃতি দিয়াছেন: ‘গত ২৯শে জানুয়ারী “প্রতিরোধ দিবস” পালন সম্পর্কে স্থানীয় সংবাদপত্রগুলিতে যে বিবরণী প্রকাশিত হইয়াছে তাহা পাঠ করিয়া আমি অত্যন্ত বিস্মিত হইলাম। এই সকল সংবাদে ২৯শে জানুয়ারী তারিখের “প্রতিরোধ দিবস” পালন সম্পর্কে যথেষ্ট বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হইয়াছে। প্রায় ১৫ দিন পূর্ব্বে মওলানা ভাসানী এই দিবস পালনের কথা ঘোষণা করেন এবং এই সম্পর্কে প্রস্তুতিমূলক কার্য্য যখন অনেক দূর অগ্রসর হইয়া গিয়াছে, তখন কিছু সংখ্যক লোক ভারতে এক শ্রেণীর সংবাদপত্র কর্ত্তৃক হজরত মোহাম্মদ সম্পর্কে অবমাননাকর ভাষা ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জ্ঞাপনের তারিখ হিসাবে উক্ত দিনটিকেই বাছিয়া লন। হজরত মোহাম্মদের প্রতি এইরূপ জঘন্য আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জ্ঞাপন সম্পর্কিত এইরূপ একটি সভার প্রতি আমাদের অবশ্য পূর্ণ সমর্থন ও সহানুভূতি ছিল। কিন্তু এই উদ্দেশ্যে তারিখ ও সময় নির্দ্ধারণের ব্যাপার দেখিয়াই আমাদের মনে গভীর সন্দেহ জাগে। কারণ, কিছু সংখ্যক লোক যে জনসাধারণের মনোভাবের সুযোগ লইয়া আমাদের উদ্দেশ্য পন্ড করিয়া দেওয়ার চেষ্টা করিয়া থাকে, এইরূপ অভিজ্ঞতা অতীতেও আমরা লাভ করিয়াছি।- এ, পি, পি।

উল্লেখ্য, ইতিহাসে দেখা যায়, পাকিস্তানী শাসন-শোষণে এবং তৎকালীন পূর্ববাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তানে তখন দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছিল এবং এই অবস্থানের অবসানে প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ এই ‘প্রতিরোধ দিবস’এর ডাক দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ভাষায় ‘এই কিছুসংখ্যক লোক’ই যে ধর্মব্যবসায়ী এবং সরকারের লোক সেটি বুঝতে সচেতন কোনো মানুষেরই অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। অত্যন্ত প্রতাপশালী পাকিস্তানী শাসকচক্র ও ধর্মজীবী-ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদের ভাষাটুক ব্যক্ত করা বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই সম্ভব ছিল। এই ধর্মব্যবসায়ীরা এক ঢিলে অনেক পাখি মারতে চায়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এরা পেরে উঠে না। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ঠিকই। এদের মুখোশও উন্মোচিত হয়েছিল। যদিও এদের কেউ এখন আর রাজাকার পরিচয় দিতে চায় না। 

কিন্তু ‘চোরে না-শুনে ধর্মের কাহিনী।’ তাই তারা ধর্মের নামে অধর্মের কাজ করতে কখনও থেমে থাকেনি।  আজও ইসলাম ধর্মের নামে বিভিন্ন লেবাস পরে ‘এই কিছু সংখ্যক লোক’ বাংলাদেশের মানুষের শান্তি বিনষ্ট করতে, স্বাধীনতা সংগ্রামের সকল অর্জন ধূলিসাৎ করে দিতে দেশি-বিদেশি অপশক্তির ইন্ধনে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে সুযোগ-সুবিধার নানা ফাঁক-ফোকরে ‘ এই কিছু সংখ্যক লোক’ আরও হৃষ্টপোষ্ট হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে এ পর্যন্ত ২১ বার হত্যার প্রচেস্টা চালিয়েছে। এদের আরও যতসংখ্যক  ষড়যন্ত্র যা সচেতন দেশবাসী কারোরই অজানা নয়।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে পাকিস্তানী ও সাম্রাজ্যবাদের মদদপুষ্ট ধর্মব্যবসায়ীরা কতটুকু কদাচার  দেখাতে পারে তার সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ এবার দেখা গেল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। এদের এক নেতার মুখোশ উন্মোচন হলো সোনারগাঁওয়ের হোটেলে। এদের ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১৩ জন সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ঘটলো। নিহত এসব পরিবারের লোকদের প্রতি বিন্দুমাত্র সহানুভূতি থাকলে কেউ এইসব হোটেলে এভাবে যেতে পারে না। অবশ্য ব্রিটিশ আমলে তাদেরই পৃষ্ঠপোষতায় তৈরি কোনো মাদ্রাসায় সূফীতত্ত্বের তথা মানবতাদের চর্চা হবে, দেশ ও মানুষের পক্ষে কথা বলবে, ধর্মের শান্তি ও সত্যের বাণী তুলে ধরবে সমাজ ও দেশের কলাণে এমনটি আশা করা পণ্ডশ্রম ছাড়া কিছু নয়। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, বিগত ২০/২৫ বছর ধরে সারা দেশের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ও শত শত মাদ্রাসা সৃস্টির পেছনে কী উদ্দেশ্য, এসবে কী ধর্মের কী পড়ানো হয়, এসব থেকে পাশ করা ছাত্র’ছাত্রীরা দেশ-জাতি-ধর্ম এমনকি নিজের কল্যাণে কী ভূমিকা ও পালন করছে -এসব বিষয়ে সরকার ও স্থানীয় কোনো কর্তৃপক্ষের কোনোই বক্তব্য নেই। তবে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সাধারণ মানুষ তথা মানবতার কল্যাণে এসব মাদ্রাসা কী কাজ করছে তা সচেতন ও বিবেকবান মানুষেরা ঠিকই বুঝতে পারছেন। ভোগবাদী এইসব খারেজী ধর্মব্যবসায়ীকে ধর্মের কাজ থেকে যতদূরে রাখা যাবে ততই মঙ্গল বলে অভিমত দিচ্ছেন বিবেকবান মহল।  উল্লেখ্য, সরাইল-ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলে ইসলামের মর্মবাণী প্রথম প্রচারিত হয়েছিল আজ থেকে ৭ শ’ বছর আগে। খড়মপুরে সূফী সাধক সৈয়দ আহমদ গেছু দরাজ বা শাহ্ পীর (কল্লা শহীদ), শাহজাদাপুরে সূফী সাধক শাহ্ রুকুনউদ্দিন আনসারীএঁর পবিত্র দরগাহ এই ইতিহাসের উজ্জলতম নিদর্শন। শাহজাদাপুর গ্রামে বড় বড় কয়েকটি দীঘি আজও প্রমাণ করে সূফী সাধকগণ জনহিতকর কাজে কীভাবে নিজের নিজের জীবনকে ব্যয় করেছিলেন। আর আজ থেকে ৫ শ’ বছর আগে দিল্লির মোগল শাসন থেকে বাংলার স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা ঈশা খাঁর পিতা কালীদাস গজদানী ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তরফ-বিজেতা আউলিয় সৈয়দ নাসিরউদ্দিনের প্রপৌত্র সৈয়দ ইব্রাহীমএঁর কাছে। সৈয়দ ইব্রাহীম খ্যাতনামা ব্যক্তি ছিলেন। বিদ্যার্জন করে তিনি বাংলার সুলতান জালালউদ্দিন মুহাম্মদ শাহ্ (১৪১৫-১৪৩১) থেকে মালেকউল উলামা উপাধিপ্রাপ্ত হন। (হযরত শাহজালাল ও সিলেটের ইতিহাস, সৈয়দ মুর্তাজা আলী, পৃ.৩০)। অর্থাৎ, এ অঞ্চলে সূফী ইসলামের প্রবর্তনের ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং তাঁরা ছিলেন অসাম্প্রদায়িক ও মানবতাবাদী। তাঁদের দরগাহ আজও সব ধর্মের, সর্বস্তরের মানুষের, শান্তি ও মঙ্গলের প্রত্যাশীদের মিলনকেন্দ্র। তখন এই অঞ্চলে কোনো মাদ্রাসা-মসজিদ ছিল না। অথচ আজ এত মাদ্রাসা-মসজিদ থাকা সত্ত্বেও নিজের দেশ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের জনকের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনের সময়ে এত অশান্তি-হানাহানির কারণ অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে-দেশকে এগিয়ে নিতে হলে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সূফী সাধকদের প্রচারিত ইসলামের মর্মবাণী প্রচারে আজকের দিনের মাদ্রাসা-মসজিদ-স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করতে সরকার ও প্রশাসন এবং সরকারি দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে-এটিই আজ দেখতে চায় বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষেরা।