মুম্বাইয়ের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পিছনে চীনা হ্যাকার!!!

সংলাপ ॥ জল্পনা আগেই ছড়িয়েছিল। এবার মিলল বেসরকারি স্বীকৃতি। সীমান্ত নিয়ে নয়াদিল্লি-বেজিং সংঘাতের আবহে ভারতের পাওয়ার গ্রিডের উপর হামলা চালিয়েছে চীনের একদল হ্যাকার। তাদের সঙ্গে চীনা সরকারেরও যোগাযোগ রয়েছে। এমনই চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট প্রকাশ করল এক মার্কিন সংস্থা। আর তারপরেই গত বছর মুম্বই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। প্রশ্ন, তবে কি গত অক্টোবরে অনলাইনে হানা দিয়েই হ্যাকাররা মুম্বইয়ে অন্ধকার নামিয়ে এনেছিল?

বিভিন্ন দেশের নাগরিক ও সংস্থার ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে গবেষণা চালায় মাসাচুসেটসের ‘রেকর্ডেড ফিউচার’ নামে এক সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা। চীনের সঙ্গে যোগসাজশ থাকা ‘রেডইকো’ নামে এক সংস্থা প্রচার চালাচ্ছিল, ভারতীয় পাওয়ার সেক্টরকে তারা টার্গেট করেছে। রেডইকোর কার্যকলাপ ও সক্রিয়তা নিয়ে সম্প্রতি গবেষণা চালায় রেকর্ডেড ফিউচার। তারা সেই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেখানেই ভারতের পাওয়ার গ্রিডের উপর চীনা হ্যাকার হানার তথ্য উঠে এসেছে।

মার্কিন সংস্থা জানিয়েছে, চীন সরকারের মদতে সে দেশের হ্যাকাররাই ওই বিভ্রাট ঘটিয়েছিল। ২০২০ সালে গলওয়ানে ভারতীয় সেনার সঙ্গে সংঘর্ষের পরই চীনারা ভারতের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থাগুলিকে ম্যালওয়ারের মাধ্যমে অচল করে দেওয়ার চেষ্টা করে। ওই রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে, দেশের প্রায় সর্বত্র বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রগুলির প্রযুক্তিতে ঝাঁকে ঝাঁকে চীনা ম্যালওয়্যার ঢুকতে থাকে। শুধু তা-ই নয়, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন এবং একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রযুক্তিতেও ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়া হয়। যদিও রেকর্ডেড ফিউচার জানিয়েছে, বেশিরভাগ ম্যালওয়ারগুলিই অ্যাক্টিভেটেড হয়নি।

এদিন রিপোর্ট প্রকাশ করে রেকর্ডেড ফিউচার জানিয়েছে, পাওয়ার গ্রিডে চীনা হ্যাকার হানা নিয়ে সরকারিভাবে কিছু বলার আগে ভারত সরকারের বিভাগীয় তদন্ত করা উচিত। কেন্দ্র জানিয়েছে, চীনা হ্যাকার হানার চেষ্টায় কোনও তথ্য লোপাট হয়নি। বিদ্যুৎ মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, গত বছরের ১৯ নভেম্বর সিইআরটি-ইন থেকে একটি ইমেল এসেছিল। সেখানে শ্যাডো প্যাড নামে একটি ম্যালওয়ার হানার কথা বলা হয়েছিল। সেই হানা রুখে দিতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

যদিও ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ সংবাদপত্রে এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশের পর মহারাষ্ট্র সরকার সাইবার হানার বিষয়টি মেনে নিয়েছে। সোমবার রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী নিতিন রাউত বলেন, নিউইয়র্ক টাইমসের দাবি সত্য। আমাদের ৩ সদস্যের একটি দল তদন্ত করে দেখছে। প্রসঙ্গত, গত ১২ অক্টোবর গ্রিড বিপর্যয়ে মুম্বইয়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জেরে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। করোনার জেরে যাঁরা ঘরে বসে কাজ করছিলেন, তাঁরা ব্যাপক সমস্যার মুখে পড়েছিলেন। মুম্বইয়ের পরিবহণ ব্যবস্থা, শিল্প ও শেয়ারবাজারেও ব্যাপক প্রভাব পড়ে। কোভিড রোগীদের ভেন্টিলেটর সক্রিয় রাখতে চালু করতে হয় জেনারেটর। বন্ধ হয়ে যায় কল-কারখানায় উৎপাদন। বিপুল ধস নামে শেয়ারবাজারে। ওইটুকু সময়ের মধ্যেই ঘণ্টায় প্রায় ২৫৮ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছিল বলে খবর। শুরু যায় জোর বিতর্ক। সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব থ্যাকারে। প্রায় দু’ঘণ্টা পর ফিরে এসেছিল বিদ্যুৎ। ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।