প্রবাহ

সাম্প্রদায়িক সঙ্কীর্ণতার বিষকণা

ধর্মোন্মাদনার তীব্র জিগিরে !!!

সংলাপ ॥ আমাদের চেতনার যাত্রাটা সম্পূর্ণ সামনের দিকে হয়নি, পিছনের দিকে হয়েছে বেশ খানিকটা। সাম্প্রদায়িক সঙ্কীর্ণতার বিষকণা যে ঢুকে গিয়েছে এ দেশের শিরায়, তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এ বিষকণার উপস্থিতি যতটা ঝাঁঝালো, দু-তিন দশক আগে বা তারও আগে যে ততোটা ছিল না, তাও আজ বেশ বোঝা যায়। শিল্পীর যে জাত-ধর্ম হয় না, সে কথা বাংলাদেশ শতকের পর শতক ধরে জানে। বিষকণাগুলোই বিপদ ডাকছে। এর বিরুদ্ধে এবার একটা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলার সময় এসে গেছে। বাংলাদেশের চিরন্তন ঐতিহ্যের বিপরীতে গিয়ে, বাংলার পরম্পরার অমর্যাদা করে, বাংলার সামাজিক বুনটটাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে যে সব কণ্ঠস্বর প্ররোচনা দেয়ার চেষ্টা করছে, সে সব কণ্ঠস্বরকে সমস্বরে বাধা দিতে হবে। বিষটাকে আর একটুও ছড়াতে দিলে চলবে না। বাধা যদি না দেয়া হয় আজ, বিষকণা কিন্তু অচিরেই বিষবৃক্ষ হয়ে উঠবে। সেদিন বড় সুখের হবে না।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই মত, ধর্মীয় মাহাত্ম্য এমনই যে, যুক্তি যা-ই খাড়া করা হোক না কেন, রাজনীতিকরা তা এড়াতে পারছেন না। ধর্মীয় উন্মাদনা ডেকে আনছে সংঘর্ষ, বিভাজনের রাজনীতি। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষ। দাঙ্গা হাঙ্গামা বা যে কোনও সংঘাতে তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। সুতরাং সবার আগে রাজনীতিকদের আরও বেশি করে সংগঠিত করতে হবে এই অংশের মানুষকে। প্রয়োগ করতে হবে শিক্ষা গরিব মানুষের কল্যাণের জন্য। শ্রমজীবীদের স্বার্থে তাদের আরও বেশি করে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা নিতে হবে। মানুষের ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত নয়, তাদের চিন্তায় যেভাবে বিষ ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে তার বিরুদ্ধে বাঙালিদের ব্যাপক সংগ্রাম গড়ে তোলার সময় বহমান। ধর্মকে রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার করার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে হবে রাজনীতিক এবং পেশাজীবিদেরকে।

ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে রাজনীতির এত নিবিড় সংযোগ যে সূত্র ধরে তৈরি হয়, সেই যোগসূত্র ধর্মাচরণের জন্য কতটুকুই বা জরুরি, সে সব প্রশ্নের সদুত্তর মিলবে না।  ধর্ম আর রাজনীতিকে গুলিয়ে দেয়ার যে অপচেষ্টা, তার বিরুদ্ধে প্রশ্ন বহুবার দেশের বহু প্রান্ত থেকে উঠেছে। সদুত্তর কখনওই মেলেনি। ধর্মোন্মাদনার তীব্র জিগিরে জিজ্ঞাসু কণ্ঠস্বরগুলোই ডুবে গিয়েছে বার বার।  ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে মিশিয়ে ফেলার হাতছানিতে বাংলা সাড়া দেয়নি এত দিন সে ভাবে। প্রশ্ন তুলেছে বরং সে অপচেষ্টার বিরুদ্ধে বার বার, কিন্তু ধর্মীয় রাজনৈতিকীকরণের প্রচেষ্টা এবার যখন অত্যন্ত সংগঠিতভাবে শুরু হয়েছে, তখন আগের চেয়েও জোর দিয়ে প্রশ্নগুলো তোলা জরুরি।

সাংবিধানিকভাবে না মানাক, চোখের অভ্যাসে মানায়। বিরোধী রাজনীতিক-দলগুলোকে এই ধাঁচের কর্মসূচিতেই সবচেয়ে সাবলীল হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত দেশবাসী। কিন্তু আওয়ামী লীগের রাজনীতিটা তো কোনও কালেই এই ধাঁচের নয়। তা হলে এ পথে পা বাড়াচ্ছে কেন আওয়ামী লীগ? খেলাটাকে ধর্মীয় ময়দানে নিয়ে যেতে দিচ্ছে কেন আওয়ামী লীগ? রেষারেষিতে নেমে রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে গুলিয়ে বাংলার সংস্কৃতি নষ্ট হচ্ছে। রাজনৈতিক স্বধর্মে নিধন শ্রেয়, কিন্তু পরধর্ম ভয়াবহ এই আপ্তবাক্য স্মরণ রাখা অত্যন্ত জরুরি। যে দিন রাজনীতিকরা এই মেঠো সমস্যা বুঝতে পারবেন, সেদিন দেখা যাবে, দেশটা বদলে গিয়েছে।

নিজেদের অসাম্প্রদায়িক বলে দাবি করা অনেক বাঙালিই সাম্প্রদায়িক রোগে আক্রান্ত

নিরাময় ঘটাতে হবে মানসিক স্থবিরতার

সংলাপ ॥ গলদ রোগ রয়ে যাচ্ছে চেতন জগতের শেকড়েই। সমস্যাটা শেকড়ে বলেই রোগমুক্তিটা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ওপরে ওপরে চিকিৎসা করে লাভ খুব হবে না, গভীরে গিয়ে নিরাময় ঘটাতে হবে এই মানসিক স্থবিরতার। সহিষ্ণুতা, উদারতা, মানবিকতা ইত্যাদি কোনও জাতির বা ভাষার বা ধর্মের বা বর্ণের ঐকান্তিক অধিকার বা পরিচিতি নয়। এই সবই আসলে চলমান সভ্যতার শিক্ষা, প্রতিটি সভ্য মানুষের পরিচিতি, প্রতিটি সভ্য মানুষের আবশ্যিক বৈশিষ্ট। কিন্তু সে কথা আমরা স্মরণে রাখছি না। সাম্প্রদায়িক হিংসার প্রেক্ষিতে উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং সভ্যতার দোহাই পেড়ে উন্মত্তদের থামতে বলছি। আমাদের মধ্যে অনেকেই বার বার বলছেন, ‘বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি’, অথবা ‘বাংলাদেশে এ সব হয় না’ অথবা ‘বাঙালির সংস্কৃতিতে এ সব নেই’। আমাদের প্রত্যেককে স্মরণ রাখতে হবে, পৃথিবীর সব সভ্য মাটিই দুর্জয় ঘাঁটি, পৃথিবীর কোনও সভ্য প্রান্তেই এ সব হয় না, পৃথিবীর কোনও সভ্য সংস্কৃতিতেই এ সব নেই। শুধু বাংলাদেশ  খুব উদার, সহিষ্ণু এবং মানবিক আর উপ-মহাদেশের অন্য নানা প্রান্ত অনুদার, অসহিষ্ণু এবং অমানবিক এই ধরনের মন্তব্য বা মতামত বা ভাব প্রকাশের মধ্যেও একটা সাংঘাতিক সাম্প্রদায়িকতা রয়েছে।

সেটাকে আমরা চিনতে পারি না অনেকেই। নিজেদের অসাম্প্রদায়িক বলে দাবি করা অনেক বাঙালিই এই সাম্প্রদায়িকতায় আক্রান্ত। যে কোনও ধরনের সাম্প্রদায়িকতাকে সমূলে উপড়ে ফেলার সন্ধিক্ষণ উপস্থিত হয়েছে আজ। অতএব প্রত্যেককে আত্মবিশ্লেষণ করতে হবে। কণামাত্র সাম্প্রদায়িকতার অস্তিত্বও থাকলে, তারও বিনাশ ঘটাতে হবে। তা হলেই মৌলিক পরিবর্তনটা আসবে। তা হলেই এই অনর্থক এবং বর্বরোচিত অশান্তি থেকে দূরে থাকতে পারব আমরা। বাংলাদেশে এ সব হয় না, বাংলাদেশের মাটিতে সাম্প্রদায়িকতা দেখা যায় না এ জাতীয় সারবত্তাহীন মন্তব্য করে লাভ নেই। কারণ তাতে সঙ্কটমুক্তির কোনও পথ নেই। আমরা যে ভুল পথে পা বাড়াচ্ছি, সেই বার্তাটা চারিয়ে দেয়াই সবচেয়ে জরুরি। একটা বিভাজন যখন রক্তাক্ত করছে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে, তখন বাঙালি আর বাংলাদেশী বা বাঙালি মুসলমান আর মুসলমান বাঙালি বা বাংলা আর না-বাংলার মধ্যে বিভাজনের তত্ত্ব সামনে আনা যে বিচক্ষণতার কাজ নয়, সে কথা বোঝা জরুরি খুবই বিশেষ করে রাজনীতিক সম্প্রদায়ের।

দেশের বা পৃথিবীর কোনও প্রান্তেই সাম্প্রদায়িক হিংসা কাম্য নয়। এই হিংসা মানবতার ঘোরতর অপমান। কোথাও অশান্তি চাই না, দেশের কোনও প্রান্তেই হিংসার আগুন চাই না আমরা। মসজিদ মন্দির গীর্জা মঠ দরবার আস্তানা আশ্রম যাত্রী সবাই শান্তিতেই বাঁচতে চান, সকলেই জীবনে সুস্থিতি চান, পারস্পরিক সম্প্রীতি চান।

তা সত্ত্বেও অশান্তি হচ্ছে, সাম্প্রদায়িকতার আগুন লেলিহান শিখা সমাজের  মাঝে-মধ্যেই আত্মপ্রকাশ করছে। আগুনের শিখাটা লকলক করে উঠতে পারছে কারণ, সাম্প্রদায়িকতার বীজ নানা রূপে আমাদের অনেকের মধ্যেই কোথাও না কোথাও রয়ে গিয়েছে। সেই বীজই আগুনে ইন্ধন জোগাচ্ছে। সেই বীজ রয়েছে বলেই ধর্মীয় সঙ্কীর্ণতার কারবারিরা আমাদের অনেককেই আজও ফাঁদে ফেলতে পারছে।

সাম্প্রদায়িকতার বা সঙ্কীর্ণতার প্রতিটি বীজকে চিহ্নিত করতে হবে, ছুঁড়ে ফেলতে হবে অস্তিত্বের অনেক দূরে। তার জন্য শুধু কোন এলাকায় নয়, গোটা দেশে শান্তি বহাল রাখার তাগিদ অনুভব করতে হবে। শুধু দেশকে নিয়ে নয়, গোটা পৃথিবীকে নিয়ে ভাবতে হবে। যে দিন সে ভাবে ভাবতে পারবে সবাই, সে দিন আর হয়তো দেখতে হবে না কোনরকম হিংসার পুনরাবৃত্তি।

সমাজ ও বাস্তবের দ্বন্দ্ব, সমাজ-পরিবেশের নিজস্ব ঘাত-প্রতিঘাত যে-ভাবে ব্যক্তিকে নাড়া দেয়, তার চিন্তাজগতের পরিবর্তন বা পরিণতি ঘটায়, সেই গতিশীলতা নানা ভাবে ধরা পড়তে পারে কর্মে। ব্যক্তি অনাগত দিনকে কল্পনায় যে-ভাবে আঁকছেন, সেই ছবি বদলে যেতে পারে রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান পরিবর্তনের সঙ্গে-সঙ্গে। কিন্তু একটা বিশেষ মুহূর্তে ব্যক্তি যে কর্মের জন্ম দিচ্ছেন, তার সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে ওই ব্যক্তির তৎকালীন দৃষ্টিভঙ্গির সাদৃশ্য থাকে। ব্যক্তির যে কোন শিল্পকর্মের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। শিল্প সত্যনিষ্ঠ  তারপরে সৌন্দর্য নিষ্ঠ। ব্যক্তির নীতি আর ব্যক্তির কর্মের নীতি আলাদা হয়ে গেলে সত্যনিষ্ঠার প্রশ্নে বিচ্যুতি আসবেই, আর কোথাও না কোথাও সে ফাঁকি ধরাও পড়বে।

সমাজের অন্যায় বৈষম্য আর কদর্য ভ-ামির দিকে আঙুল তুলতে পারলে, শোষিত মানুষের পাশে থাকার উজ্জ্বল অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়া যায়। ব্যক্তির শিল্পগুণকে এতটুকু ক্ষুণ্ণ না করে তার প্রেরণা-জাগানো কর্মে যে সুস্পষ্ট নৈতিক অভিমুখ নির্দেশ করে, ব্যক্তির নৈতিক চেতনা আর তার কর্ম নীতির একাত্মতা ছাড়া তা সম্ভব নয়। কোন পরিস্থিতিতে কী কারণে ব্যক্তির নৈতিক অবস্থানে কতটা পরিবর্তন এসেছিল বা আসছে, তা কতটা অভিপ্রেত ছিল বা আছে, এগুলো নিয়ে নিজের সাথে নিজের বা আদর্শিক ব্যক্তিত্বদের সাথে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু স্মরণ রাখতে হবে জীবন ও কর্ম সাধারণ মানুষের দুঃখ-বেদনার সঙ্গে নিবিড় সংযোগ রেখেই চলে।

এখন সময় অতন্দ্র প্রহরার

সংলাপ ॥ দেশের মানুষের জাতীয়তাবোধ, বিশ্বাস, ধারণা, অনুভূতি, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি এবং রাজনৈতিক কার্যক্রমের বিষয়াদি নিয়ে গড়ে ওঠে রাজনৈতিক সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতি উর্দ্ধমুখী হয় রাজনীতিকদের আদর্শিক সামগ্রিক কর্মকা-, কথাবার্তা, পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ, সহনশীলতা, পরমতসহিষ্ণুতা দ্বারা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি কোনভাবেই সর্বজন গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে উঠতে পারছে না। পরনিন্দা, পারস্পারিক অশ্রদ্ধা, চরিত্র হনন, অসম্মানই যেন রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আদর্শিক ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে তাদের অসম্মান, কুৎসা রটনা ও নিচু করে জাতির সামনে তুলে ধরার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিও দিন দিন উগ্র হচ্ছে। রাজনীতিকরা একজন আরেকজনকে প্রতিপক্ষ না ভেবে রাজনৈতিক প্রতিযোগীতা ভেবে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতেন তাহলে তরুণ, শিক্ষিত ও মেধাবী প্রজন্ম রাজনীতিতে অংশগ্রহণে আরো আগ্রহী হতেন। কিন্তু রাজনীতিকরা ওই মানুষ গড়ার কারিগর হতে চাচ্ছেন না ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থে।

মানুষের উপর আস্থা হারানো অর্থই সংকটে পড়া, জ্ঞানী-গুনীজন এ কথা বলে গিয়েছেন। গণতন্ত্রে আস্থা হারানোকে কি সংকট বলা যাবে? একটা যোগ অবশ্য আছে। অধিকাংশ মানুষের মতের প্রতিফলনে দেশের শাসনব্যবস্থা পরিচালনা, সেটাই তো গণতন্ত্রের উৎস। গণতন্ত্রে আস্থা হারালে মানুষ দাঁড়াবে কোথায়? বিকল্পগুলো অত্যন্ত বিপজ্জনক, যথা একনায়কতন্ত্র, বা মিলিটারি-রাজ। গণতন্ত্রে বিরোধী দল আবশ্যক। তাদের কাজ শাসকদলের ভুলত্রুটি তুলে ধরা। সংসদ কক্ষে এবং সমাজের সব স্তরে জোরালো ভাষায় সে-কাজ করা সম্ভব। অভিযোগ অসত্য হলে শাসকদল তা খ-ন করবেন, সত্য হলে শুধরে নেবেন। বিরোধী পক্ষের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে, এমন ধারণা যেন না হয়।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোরালো ভাষায় নিজের মতাদি বলে থাকেন। দেশের সাধারণ নাগরিকের মোবাইলে বা টিভিতে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা একাধিকবার ভেসে আসে। গুরুতর উগ্র হিং¯্র ঘটনার পর তিনি যখন সাময়িক বাক্যহারা হয়ে যান তখন দেশের মানুষ বিভ্রান্ত ও অসহায় বোধ করেন।

শুধুমাত্র সংসদ অচল-সচল হওয়ার কারণে গণতন্ত্রে মানুষ আস্থা রাখবেন না হারাবেন এমন নয়। সাম্প্রতিককালে গণআলোচনায় গণতন্ত্রে ব্যর্থতা বা দুর্বলতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। অধিকাংশের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যখন চিন্তা করেন তাদের মতো দেশের সব মানুষের ওপর চাপিয়ে দেবেন তখন তাকে সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ ছাড়া আর কিছু বলার নেই, যা কিনা গণতন্ত্রের সম্পূর্ণ বিরোধী। যখনই কোনও দল বিপুল জনমত নিয়ে ক্ষমতায় আসে, তাদের মধ্যে এই প্রবৃত্তি চোখে পড়ে।

মানুষ যখন মত দান করেন তখন যে সর্বদা যথাযথ বিবেচনাবোধ কাজ করে, এমন নয়। কখনও তারা নির্বাচনী প্রচারে বিভ্রান্ত হন, কখনও বা যে শাসকদলের অধীনে আছেন, তাদের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে অপর কোনও দলকে ক্ষমতার আসনে বসান। মানুষের এই আশা ও আশাভঙ্গের কথা থেকে বলা যায়, দুর্ভাগা সেই জাতি যে নতুন শাসকদলকে জয়ধ্বনি দিয়ে অভ্যর্থনা করে, তারপর বিদায় দেয় ধিক্কারে, আবার অপর এক দলকে জয়ধ্বনি দেয় ক্ষমতায় স্বাগত জানাবে বলে।