ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১৭৮ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৫ হাজার ১৩৮ কোটি টাকার বেশি (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। সোমবার (১ মার্চ) এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪৫ কোটি ডলার।
করোনা মহামারির মধ্যেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৬৬৮ কোটি ৭২ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা)।
রাহিঙ্গা সঙ্কটে আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ওআইসি
মিয়ানমারের রাখাইন থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রতি পূর্ণ সংহতি জানিয়েছে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। এছাড়া রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে করা মামলায় আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মুসলিম দেশগুলোর এ জোট।
গত সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ও প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এ প্রতিশ্রুতির কথা জানান সংস্থাটির রাজনীতি বিষয়ক সহকারী মহাসচিব ইউসেফ আলডোবেয়া। এ সময় ওআইসির প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের গভীর প্রশংসা করে। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ আখ্যা দেন। ভাসানচরের বিষয়ে বাংলাদেশের নেওয়া উদ্যোগেরও প্রশংসা করে তারা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওআইসির প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশে স্বাগত জানান এবং ভাসানচরের অবকাঠামোগত নির্মাণের বিষয়ে তাদের অবহিত করেন যা এখন প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
আবদুল মোমেন বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ওআইসির প্রতিনিধি দলকে তাদের প্রচেষ্টা আরও জোরদার করার আহ্বান জানান। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরের কথা জানিয়ে বলেন, তিনি দেশটিকে রোহিঙ্গা বিষয়ক বিশেষ দূত নিয়োগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন এবং এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান অর্থাৎ নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং তাদের স্বদেশে স্থায়ী প্রত্যাবাসনকে এ সমস্যার কার্যকর সমাধান বলে পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রতিমন্ত্রী ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে মিয়ানমারের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য ক্রমাগত চাপ বজায় রাখার আহ্বান জানান। রোহিঙ্গাদের জন্য ওআইসি মানবিক ফান্ড তৈরি করায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ওআইসির সদস্য দেশগুলোর প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
ওআইসির ফান্ড থেকে আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশ ও গাম্বিয়ার পাশে থাকতে সংস্থাটিকে আহ্বান জানান শাহরিয়ার আলম। এ সময় ওআইসিকে সব ধরনের সহযোগিতার কথা জানান তিনি।
সফররত ওআইসির সহকারী মহাসচিব জানান, তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করেছেন এবং বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে একমত হয়েছেন।
এর আগে ওআইসির প্রতিনিধিদল পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে তাদের সফর সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করেন।
বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব স্থায়ীভাবে এই মানবিক সংকট নিরসনে ওআইসিকে অব্যাহত সহায়তার আহ্বান জানান।
‘মায়ের মতো পরিণতি হতে পারত’: প্রিন্স হ্যারি!
মায়ের মতো পরিণতি হতে পারত। প্রিন্স ডায়ানার মৃত্যুর ঘটনাকে উল্লেখ করে ওপরা উইনফ্রে-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজেদের সম্পর্কে এমন আশঙ্কার কথাই বলেছিলেন প্রিন্স হ্যারি। সাক্ষাৎকারে বলা সেই আশঙ্কার কথাই সামনে আসে রবিবার। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
গত বছরই রাজকীয় দায়িত্ব এবং কর্তব্যের পাট চুকিয়ে বাকিংহাম প্যালেস ছেড়ে ছিলেন হ্যারি এবং স্ত্রী মেগান। তাঁরা ক্যালিফোর্নিয়ায় গিয়ে ওঠেন। মেগানকে পাশে বসিয়ে সাক্ষাৎকারে হ্যারি বলেন, “আমি যথেষ্ট খুশি যে, মেগানকে পাশে বসিয়ে এই সাক্ষাৎকার দিতে পারছি।” তাঁর মায়ের যে পরিণতি হয়েছিল, সেই বিভীষিকাময় ঘটনাকে কল্পনা করতেও তাঁর কষ্ট হচ্ছে সেটাও জানিয়েছেন হ্যারি।
রাজপরিবার ছেড়ে বেরিয়ে আসা একটা কঠিন সিদ্ধান্ত তো বটেই। তবে তাঁরা দু’জনে যে পরস্পরের জন্য বাঁচতে পারছেন, সেটাই অনেক বলে জানান হ্যারি।
হ্যারি এবং তাঁর স্ত্রী মেগানের সঙ্গে ব্রিটেনের রাজপরিবারের ‘তিক্ত’ সম্পর্কের বিষয়টি কারও অজানা নয়। রাজপরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে যে তাঁদের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছিল, তা ক্রমশ প্রকাশ্যে এসেছিল। তার পর গত বছরই তাঁদের রাজকীয় দায়িত্ব এবং কর্তব্য থেকে সরে দাঁড়ান হ্যারি এবং মেগান। কারণ হিসেবে দাবি করেছিলেন, রাজকীয়তার বাইরে বেরিয়ে তাঁরা সাধারণ জীবন কাটাতে চান। শুধু তাই নয়, তাঁদের জীবন নিয়ে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপের অভিযোগও তুলেছিলেন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে।
মিয়ানমারে ফেরার নির্দেশ ১০০ কূটনীতিককে

বিদেশি মিশনে দায়িত্বরত মিয়ানমারের কমপক্ষে ১০০ কূটনীতিককে দেশে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সেনা কর্তৃপক্ষ। জাতিসংঘে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াউ মো তুনের সেনাবিরোধী বক্তব্যের পরই ১৯টি দেশে সু চি পন্থী কূটনীতিকদের এই নির্দেশ দেওয়া হলো।
এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই নির্দেশনা মিয়ানমারের জান্তা সরকার গোপন করতে চাইলেও এ সম্পর্কিত বেশ কিছু নথি ফাঁস হয়ে গেছে বলে গত সপ্তাহের সোমবার খবর প্রকাশ করে দ্য ইরাবতি।
মিয়ানমার ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিউজ কভার করা থাইল্যান্ডের এই পত্রিকার খবরে বলা হয়, রবিবার এক নির্দেশনায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়বিষয়ক উপদেষ্টা ও সচিবসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ডেকে পাঠায় জান্তা সরকার। সেইসঙ্গে দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয় বিদেশি মিশনে কর্মরত প্রায় শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে।
এসব কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রিয়া, ব্রাজিল, ফ্রান্স, নরওয়ে, বেলজিয়াম, সার্বিয়া, চীনা, জাপান, ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও ফিলিপাইনের মতো ১৯ দেশে কর্মরত আছেন।
খবরে আরও বলা হয়, মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোয় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের শতাধিক কর্মকর্তাকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত। তিনি চলমান বিক্ষোভ-আন্দোলনে সমর্থন প্রকাশ করেন। প্রতিবাদের জনপ্রিয় প্রতীক তিন আঙুলে সালামও দেন। যে কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
চন্দ্রপৃষ্ঠে সূর্যের আলো পড়া অংশে মিলল জলের অস্তিত্ব

প্রথমবার ২০০৮ সালে ইসরো জানিয়েছিল, চাঁদের যে অংশে সূর্যালোক পড়ে, সেখানে জলের উপাদান রয়েছে। কিন্তু, সেই উপাদান কী অবস্থায় রয়েছে, তা নিশ্চিত করা যায়নি সেই সময়। পরবর্তী সময়ে নাসার শক্তিশালী টেলিস্কোপের সাহায্যে লাগাতার পর্যবেক্ষণ চালিয়েও (৬ পৃষ্ঠা ১ কলাম)
এবিষয়ে কোনও নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। অবশেষে নাসার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চন্দ্রপৃষ্ঠের যে অংশে সূর্যালোক পড়ে, সেখানে জলের অস্তিত্ব মিলেছে। নাসার সায়েন্স মিশন ডিরেক্টরেটের অন্তর্গত অ্যাস্ট্রোফিজিক্স ডিভিশনের ডিরেক্টর পল হারৎজ বলেন, পৃথিবীতে জল যেভাবে পাওয়া যায়, সেই একই গঠনগতভাবে এবার চাঁদের মাটিতে জল পাওয়া গিয়েছে। নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের নবীন গবেষক ক্যাসে হনিবল তাঁর পিএইচডি গবেষণাপত্রে এই বিষয় নিয়ে কাজ করছিলেন। অবশেষে তিনি সাফল্য পান। নাসার অন্তর্গত স্ট্র্যাটোস্ফেরিক অবজারভেটারি ফর ইনফ্রারেড অ্যাস্ট্রোনমির (সোফিয়া) মাধ্যমে চন্দ্রপৃষ্ঠে সূর্যালোক পড়ে, এমন অংশে জল পাওয়া গিয়েছে। তবে কত পরিমান জল সেখানে রয়েছে এবং কীভাবেই বা সেখানে জল এল? সেবিষয়ে এখনও নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। হনিবল জানান, ১৯৬৯ সালে আমেরিকার নভোশ্চররা চাঁদ থেকে যখন ঘুরে এসেছিলেন, তখন বিজ্ঞানীরা মনে করতেন চন্দ্রপৃষ্ট সম্পূর্ণ শুষ্ক। যদিও পরবর্তী সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা যায় চাঁদের দুই মেরুতেই বরফজাতীয় উপকরণের অস্তিত্ব রয়েছে। এরপরেই ২০০৮ সালে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের কৃত্রিম উপগ্রহ নিশ্চিত তথ্য দিয়ে জানায়, চাঁদের সূর্যালোক পরে এরকম অংশে জলের উপাদান (হাইড্রোজেন বা অক্সিজেন) রয়েছে। যদিও তা জল (এইচ২ও) নাকি হাইড্রক্সিল (ওএইচ) যৌগ হিসেবে রয়েছে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি ইসরোর গবেষণা। সেই গবেষণার প্রায় ১২ বছরের মাথায় নাসার বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন চাঁদে জলের অস্তিত্ব থাকা নিয়ে। উল্লেখ্য, কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ পল হেনেও একই বিষয়ে কাজ করছিলেন। ক্যাসে হনিবল এবং পল হেনের গবেষণাপত্র একইসঙ্গে ‘নেচার অ্যাস্ট্রোনমি’ নামে একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। যাকে স্বীকৃতি দিয়েছে নাসাও। একইসঙ্গে তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চাঁদের দক্ষিণাংশের ক্ল্যাভিয়াস নামক গর্তের কাছে এই জল পাওয়া গিয়েছে। ওই জায়গায় কীভাবে জল এল, তা আরও গবেষণাসাপেক্ষ। একইসঙ্গে এই আবিষ্কারের ফলে আগামীতে বিশ্বের বিজ্ঞানীদের কাছে চাঁদ সম্পর্কিত গবেষণা এবং মহাকাশের অন্যান্য রহস্য অনুসন্ধান এক অন্য মাত্রা পাবে।
আলোচনায় বসবে না ইরান হতাশা ওয়াশিংটন

ইরান পরমাণু সমঝোতা নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় বসার ইউরোপীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় হতাশা প্রকাশ করেছে আমেরিকা। ওয়াশিংটন বলেছে, তারা বিষয়টি নিয়ে অর্থবহ কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খাতিবজাদে ইউরোপীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পরপরই মার্কিন সরকার তার এ অবস্থান ঘোষণা করল। খাতিবজাদে রোববার বলেছিলেন, পরমাণু সমঝোতার ব্যাপারে ইউরোপ সম্প্রতি যে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছে তার জন্য বর্তমান সময়কে উপযুক্ত মনে করছে না তেহরান। এই সমঝোতার ব্যাপারে আমেরিকা ও তিন ইউরোপীয় দেশের সর্বসাম্প্রতিক অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে ইরান আলোচনায় না বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।
খাতিবজাদের বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মাথায় হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জেন সাকি বলেন, “আমরা ইরানের প্রতিক্রিয়ায় হতাশ হলেও একই সময়ে দু’পক্ষের এই সমঝোতায় ফিরে আসার লক্ষ্যে অর্থবহ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাতে নিজেদের প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করছি।” তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ওয়াশিংটন পরমাণু সমঝোতার বাকি পাঁচ দেশ চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, ব্রিটেন ও জার্মানির সঙ্গে আলোচনা করবে ওয়াশিংটন।
আমেরিকা দাবি করছে, পরমাণু সমঝোতায় তার ফিরে আসার একই সময়ে ইরানকেও তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ফিরতে হবে। কিন্তু তেহরান বলছে, আমেরিকা এই সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার এক বছর পর ইরান এতে দেয়া নিজের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পরিমাণ কমাতে শুরু করেছে। কাজেই আমেরিকাকে আগে এই সমঝোতায় ফিরে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরভাবে প্রত্যাহার করতে হবে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার সুফল বাস্তবে পাওয়ার পর ইরান এই সমঝোতায় দেয়া প্রতিশ্রুতিতে পূর্ণাঙ্গভাবে ফিরে যাবে।
এর আগে পরমাণু সমঝোতার ইউরোপীয় সমন্বয়কারী জোসেফ বোরেল অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের যে প্রস্তাব দিয়েছেন ওই প্রস্তাবকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সময় উপযোগী বলে মনে করে না। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খাতিবজাদেহ বলেছেন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তিন ইউরোপীয় দেশের সাম্প্রতিক অবস্থান ও পদক্ষেপই এর কারণ।
ইরানের কূটনৈতিক সংস্থার এক মুখপাত্র বলেছেন: আমেরিকার অবস্থান কিংবা আচরণে এখন পর্যন্ত কোনোরকম পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় নি। এই মুখপাত্র বলেন: বাইডেন সরকার এখনও সাবেক ট্রাম্প প্রশাসনের ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের ব্যর্থ নীতি পরিহার করে নি। এমনকি পরমাণু সমঝোতায় দেওয়া অঙ্গিকারগুলো কিংবা নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব বাস্তবায়ন করার ঘোষণাও দেন নি। খতিবজাদেহ বলেন পরমাণু সমঝোতা নিয়ে দর কষাকষির কোনো সুযোগ নেই। পাঁচ বছর আগে সেসব হয়ে গেছে।
ইরান সম্প্রতি সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এনপিটি চুক্তির সম্পূরক প্রটোকল বাস্তবায়ন বন্ধ করে দিয়েছে। পরমাণু সমঝোতার ২৬ ও ৩৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রতিপক্ষের অঙ্গিকার মেনে না চলা এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করার কারণে ওই সম্পূরক প্রটোকল বাস্তবায়ন বন্ধ করে দিয়েছে ইরান। সুতরাং পরমাণু সমঝোতা রক্ষার জন্য নতুন কোনো চুক্তির প্রয়োজন নেই। আগের সমঝোতায় ফিরে এলেই হবে। এ জন্য পরমাণু সংস্থারও কোনো সনদ কিংবা প্রটোকলের প্রয়োজন নেই।
সম্প্রতি জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি মাজিদ তাখ্তে রাভানচি আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে সে কথারই অনুবৃত্তি করেছেন। তিনি বলেছেন: আমেরিকা যদি ছয় জাতিগোষ্ঠির দলে ফিরে আসতে চায় তাহলে প্রতিশ্রুতি অনুসারে কাজ করলেই হবে। সেক্ষেত্রে ইরানের ওপর থেকে বিগত পাঁচ বছরে যত অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সেসব তুলে নিতে হবে। তাহলেই ইরান পরমাণু সমঝোতা পুরোপুরি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেবে।
ইরানের পররাষ্ট্রনীতি হলো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রক্ষা করা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা। এক্ষেত্রে খাতিবজাদেহ’র মন্তব্য পরিষ্কার ও দ্ব্যর্থহীন। পরমাণু সমঝোতা একতরফাভাবে বাস্তবায়নের কোনো অর্থ নেই।
অপরদিকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেছেন, মার্কিন সরকার ইরানের বিরুদ্ধে তাদের চাপ ও নিষেধাজ্ঞার ব্যর্থতা স্বীকার করেছে, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় বিজয়। রুহানি জনগণের উদ্দেশে বলেন,‘ইরানের সব অর্জনের পেছনে রয়েছে আপনাদের ঈমানি শক্তি, প্রত্যয় ও দৃঢ়তা।’ আমেরিকাই ইরানি জাতির মোকাবেলা নতিস্বীকার করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন,আমেরিকার নয়া সরকার এ পর্যন্ত চার বার স্বীকার করেছে যে তাদের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি ব্যর্থ হয়েছে। এটা ইরানি জাতির জন্য বড় বিজয়। কারণ যারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল তারাই নিজের মুখে স্বীকার করছে তাদের নিষেধাজ্ঞায় কাজ হয়নি।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে পশ্চিম ও দক্ষিণের দুটি বিশাল তেল-গ্যাস প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন। এর একটি প্রকল্পের আওতায় প্রতিদিন ৬৫ হাজার ব্যারেল খনিজ তেল উত্তোলন করা সম্ভব হবে।
রিয়াদে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইয়েমেন

আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইয়েমেনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই ভূপাতিত করার দাবি করেছে রিয়াদ। ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পাশাপাশি দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি প্রদেশে ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে রিয়াদ। সৌদি সরকার শনিবার দাবি করেছে, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রিয়াদের আকাশে ইয়েমেনি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে গুলি করে ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে। সৌদি আরবের আল-ইখবারিয়া টেলিভিশনে প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে গুলি ছুড়ে একটি ক্ষেপণাস্ত্রকে আকাশেই ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে।
ইয়েমেনের সেনাবাহিনী সৌদি আরবের দক্ষিণাঞ্চলীয় জিযান প্রদেশে বোমা-ভর্তি ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলেও রিয়াদ জানিয়েছে। এসব ড্রোনের অন্তত তিনটি আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে এবং বাকিগুলো হামলা চালিয়ে তাদের উৎসে ফিরে গেছে।
সৌদি সরকার দাবি করেছে এসব হামলার পেছনে আনসারুল্লাহ আন্দোলন জড়িত রয়েছে। যদিও হুথি আনসারুল্লাহ আন্দোলনের পক্ষ থেকে এ সম্পর্কে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। সৌদি আরবের পক্ষ থেকে এসব হামলায় তাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে।
সৌদি সরকার ইয়েমেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিশ্চিত করার কিছুক্ষণ আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, রাজধানী রিয়াদের অধিবাসীরা তাদের আকাশে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন।
ওমান সাগরে ইসরাইলি মালিকানাধীন একটি জাহাজে বিস্ফোরণের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার একই সময়ে সৌদি আরবে ইয়েমেনের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার খবর এল। এখনো কেউ ওই বিস্ফোরণের দায়িত্ব স্বীকার করেনি।
ইসরাইলি হামলা ঠেকাল সিরিয়া

রাজধানী দামেস্কে ইসরাইলি হামলা আবারও ঠেকিয়ে দিয়েছে সিরিয়া সামরিক বাহিনি।
সিরিয়ার গণমাধ্যম জানিয়েছে, তারা ইসরাইলের অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্রকে আকাশেই ধ্বংস করে দিয়েছে। এর ফলে সেগুলো আর লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারেনি।
সিরিয়ার সরকারি গণমাধ্যম জানিয়েছে, গত রোববার সন্ধ্যায় গোলান মালভূমি থেকে দামেস্কের বিভিন্ন স্থান লক্ষ্য করে দখলদার ইসরাইল একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। তবে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্রকেই আকাশে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। মুসলমানদের অন্যতম প্রধান শত্রু ইহুদিবাদী ইসরাইল গত কয়েক বছর ধরে মাঝেমধ্যেই সিরিয়ার ওপর বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে। সিরিয়া যে উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে সে লড়াই বানচাল করার জন্য ইসরাইল এসব হামলা চালিয়ে আসছে। যারা উগ্র সন্ত্রাসীদেরকে অর্থ, অস্ত্র ও সামরিক সহযোগিতা দিচ্ছে তার মধ্যে ইসরাইলও রয়েছে।
সাংবাদিক খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন সালমান: আমেরিকা
সৌদি আরবের ক্ষমতাধর যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমান ব্যক্তিগতভাবে সেদেশের ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে তৈরি করা মার্কিন সরকারের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিবেদনটি ধামাচাপা দিয়ে রাখলেও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তা প্রকাশ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোহাম্মাদ বিন সালমান এমন একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছিলেন যাতে সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীকে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, খাশোগিকে ‘ধরে আনতে অথবা হত্যা করতে’ হবে। এই প্রথম মার্কিন সরকার খাশোগিকে হত্যার জন্য সরাসরি সৌদি যুবরাজকে দায়ী করল। মোহাম্মাদ বিন সালমান শুরু থেকে এই হত্যাকান্ডের দায় অস্বীকার করে আসছিলেন।
এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, খাশোগি হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার দায়ে সৌদি আরবের ৭৬ নাগরিকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। এসব সৌদি নাগরিক আমেরিকার ভিসা পাবেন না। তবে বাইডেন প্রশাসন সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তাভাবনা করছে না বলে মার্কিন বার্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে।
মোহাম্মাদ বিন সালমান ও তার পিতা সৌদি রাজা সালমানের সমালোচক হিসেবে পরিচিত খাশোগি জীবনের নিরাপত্তার ভয়ে আমেরিকায় স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে গিয়েছিলেন। তিনি ওয়াশিংটন ডিসি’র শহরতলীতে বসবাস করতে শুরু করেন এবং সেখানে বসেই ওয়াশিংটন পোস্টে নিবন্ধ লিখে সৌদি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকেন। দেশত্যাগের আগে বহুদিন রাজ পরিবারের সঙ্গে জামাল খাশোগির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে তিনি খুনি মোহাম্মাদ বিন সালমান ও তার রাজ পরিবারের হাড়ির খবর জানতেন। সৌদি যুবরাজ ঠিক এ কারণেই জামাল খাশোগিকে ভয় পেতেন।
খাশোগিত ২০১৮ সালের অক্টোবরে দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য তুরস্কের ইস্তাম্বুলস্থ সৌদি কনস্যুলেটে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনতে গিয়ে নৃশংসভাবে নিহত হন। সৌদি আরব থেকে বিশেষ বিমানে করে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি দল তাকে হত্যা করার জন্য আগেই ইস্তাম্বুলে পৌঁছে গিয়েছিল এবং তারাই খাশোগিকে হত্যা করে তার লাশ টুকরো টুকরো করে ফেলে। এখন পর্যন্ত খাশোগির লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এদিকে, সৌদি ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়ার অপরাধে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার জন্য আমেরিকার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি অ্যাগনেস ক্যালামার্ড।
তিনি এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউজকে উদ্দেশ করে বলেছেন, বিন সালমানের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি তার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক লেনদেনের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। ক্যালামার্ড বলেন, যারা খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছে তাদেরকে আন্তর্জাতিক সমাজ থেকে একঘরে করে রাখতে পারলে একই ধরনের অপরাধ করার কথা যারা চিন্তা করে তারা শিক্ষা পেয়ে যাবে। খাশোগি হত্যাকান্ডের ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেয়ার জন্যও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি।