চেতনায় বাঙালিত্ব

বাহাদুর বেপারী ॥ আমাদের পরিচয় বাঙালি, আমাদের অহংকার বাঙালিত্ব। আমাদের অস্তিত্বের অংশ মা-মাতৃভাষা-মাতৃভূমি। বাংলা ভাষা পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ ভাষা। বাংলার প্রকৃতি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর প্রকৃতি। বাংলার সম্পদ আমাদের মানুষ। বাঙালি  অতিথি পরায়ণ জাতি। এই ভূখন্ড, জাতির ধর্ম কিন্তু ইসলাম না, হিন্দু না, বৌদ্ধ না, খৃষ্টানও না। এর নিজস্ব ধর্ম আছে। এই ধর্মের নাম মানবতা। সেই ধর্মেরই একটি কাজ অতিথি পরায়ণতা। বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে বারবার ষড়যন্ত্র হয়েছে কিন্তু সব ষড়যন্ত্র মুখ থুবরে পড়েছে, বাঙালি পৃথিবীর সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বারবার। জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বজ্র কঠিন, সুকোমল, মহান ডাকে বাঙালি জাতি বিশ্বের বুকে স্বাধীন হয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। তৎকালীন সময় পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল এই বাঙালিরাই। দেড় কোটি বাঙালিকে ঔষধ দিয়ে, অস্ত্র-ট্রেনিং দিয়ে, খাদ্য, আশ্রয় দিয়ে জাগ্রত রেখেছে এই বাঙালিরাই। ওই সীমানা কিন্তু বাংলার বাইরে ছিল না। ওই পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা রাজ্যগুলোই ছিল বাঙালি অধ্যুষিত এবং তারাই আমাদের বাঙালিকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে, স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত সব কিছুই করেছে।

চেতনায় বাঙালিত্ব থাকলে আমরা সবাই সত্যমানুষ। আমরা এখন আছি সত্যমানুষের যুগে। এক হাক্কানী দিবসে তিন ডিজিটের কথা নিশ্চয়ই সবার স্মরণ আছে। পৃথিবী সেই একটি জায়গায় আসতেছে, সত্যমানুষের যুগে। সত্যমানুষকুলের এই ধারা অব্যাহত থাকলে এই ডিজিট ৯৯ ছাড়িয়ে ১০০-তে যাবেই যাবে। তখন এই বাংলা, এই পৃথিবী হবে সত্যমানুষের পৃথিবী। এই বাংলায় অবশ্য-অবশ্যই ৩০ সালে ধর্ম নিয়ে আর ঝামেলা থাকবে না। ৩৮ সালে বাংলার সংসদ হবে সত্যমানুষের সংসদ, ভালো মানুষের সংসদ।

হাক্কানী সত্যব্রত দিবস, সত্য দিবস, আনন্দের দিবস। আমরা আনন্দে-মহাআনন্দে থাকি। আমার সত্য, আপনার সত্য এক হোক। আসুন সত্যকে জেনে নেই, লক্ষ বছরের সত্যের যে ধারাবাহিক ইতিহাস সেটিতো এই হাক্কানীরই ইতিহাস, সত্যব্রত দিবসেরই ইতিহাস সেটি আজ নতুন করে জেনে নেই। পৃথিবীতে এই একটি দিবসে আমার-আপনার সত্যের সাথে একাত্ম হই। সেই সত্যের ধারাবাহিকতা আমাদের চেতনায় থাকুক। আর কোন ভাইরাস যেন আমাদের চেতনায় আঘাত না করে। যার আশীর্বাদ ও কৃপায় থাকি তার কাছে আবেদন, ভাইরাস যেন আমাদের চেতনাকে আর আঘাত করতে না পারে। আমরা আঘাতহীন থাকি, মুক্ত, শূন্য থাকি। বাঙালিত্বকে ধারণ করি, বাঙালিত্বই হোক আমাদের চেতনা আর এই চেতনার মাধ্যমে হই আমরা সত্যমানুষ। আর ‘ক্বুন-ফাইয়াক্বুন’-এর আশীর্বাদে থাকি। এই আশীর্বাদে থাকলেই পৃথিবী হবে সুন্দর, আমরা হবো সুন্দর, সবাই হবো ভালো মানুষ। আর আমরা সমর্পণ করি আমাদের সকল কর্মকা- এই সকল সত্যমানুষের কাছে। বাংলাদেশ সুন্দর হোক, ভালো হোক। অনেক সুন্দর হয়েছে, অনেক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু সংখ্যা বেড়েছে বিবাহবিচ্ছেদ, বেড়েছে মাদকাসক্তির সংখ্যা। যে কোন সময় বিপর্যয় ঘটতে পারে, আর সেই বিপর্যয়কে সামনে রেখে সূফী সাধক শেখ আবদুল হানিফ একদিন বলেছেন, এই বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতিকে সাসটেইনেবল করতে হলে সামাজিক মূল্যবোধ এবং পারিবারিক শিক্ষাকে সুন্দর করতে হবে। নচেৎ যে অবস্থা শুরু হয়েছে, তাতে আমাদের ঘর-সংসার আর পারিবারিক জীবন ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছে। আর কিছু লোভী চক্র বের হয়েছে যারা এই জনপদের মানুষের একটু জায়গা-জমিনের প্রবলেম থাকলে সেখানে আঘাত হানে। একদিন নির্বাচনী ক্যাম্পিং-এ যাওয়ার সময় ৮০ বছরের এক বৃদ্ধা আমাকে বললেন, তোর নাম আমি জানি বাহাদুর। তোর দুইটি কাজ, যারা গাজা খায় তাদের মেরে ফেলবি আর যে মানুষের জমি দখল করে, যার জমি তাদের ফিরায়ে দিতে হবে। জায়গা-জমি জোরদখল, বিবাহ-বিচ্ছেদ আর মাদকাসক্তির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যে সামাজিক বিপর্যয় ঘটছে, সে বিপর্যয় থেকে জাতি মুক্তি পাক। বাঙালি শ্রেষ্ঠ জাতি, তার পরিচয় হতে হবে চিন্তা ও কর্মে। পৃথিবীর এমন কোন রাষ্ট্র তৈরি হয় নি যেখানে বাঙালির উপস্থিতি ছিল না। যে রেড ইন্ডিয়ান জাতির কথা বলা হয়, প্রমাণ হয়েছে তারাও বাঙালি। আমেরিকা স্বাধীন করেছে বাঙালি।

মালদ্বীপে বাস করে এক ছেলে তাকে একদিন জিজ্ঞাসা করলাম, বললো – দুই লক্ষ মালদ্বীপবাসীর মধ্যে এক লক্ষ বাঙালি, তারা মুসলমান। জিজ্ঞেস করলাম তাহলে কতো অংশ বাঙালি, বললো আসলেতো সাংঘাতিক ব্যাপার। বাঙালির কি আছে, জিজ্ঞাসা করাতে ছেলেটি ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্র, চিন্তায় পড়ে গেছে, বললো বাংলায় বাজার করা যায়, মাছ, গাছ পানি এগুলো বাংলা শব্দ, প্রকৃতি দেখি বাংলায়, বলে খুব খুশি। ভুলে গেলে চলবে না, হিমালয়ের পাদদেশ থেকে যে পানি গড়ায়ে বাংলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যেখানেই গিয়ে পড়েছে সেটাই বাংলা। হোক সে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া কিংবা শ্রীলংকা আর মালদ্বীপ সবই বাংলা। সৃষ্টিকর্তার কোন ইচ্ছা ছিল বলেই প্রকৃতির এই খেলায় বাংলার জল, আলো-বাতাস পেয়ে এগুলো বাংলার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ভৌগলিকভাবে যারই দখলে থাক না কেন বাংলারই অঞ্চল।

নবী মোহাম্মদ (যাঁর কৃপা আমাদের উপর বর্ষিত) যদি এই বাংলায় জন্মগ্রহণ করতেন তাহলে বেহেশতের ফল হতো আম, লিচু, কাঁঠাল, দুধের নহর হতো বাংলা। বেহেশতের যে দুধের নহরের কথা বলা হয়েছে, উটে আর কতটুকু দুধ হয়! আরবেতো দুধের নহর নেই, বাংলায়তো দুধে ভরপুর। ওইটারতো অভাব ছিল তাদের, এজন্য দুধের নহর থাকবে বেহেশতে মানে ভবিষ্যৎকাল। আর আমাদের এই বাংলায় বর্তমানেই আছে বেহেশতী সকল কিছু প্রাকৃতিকভাবে। যে কোন ফলই আমরা খাই সব ফাটাফাটি বিশে^র আর কোথাও এমন সুস্বাদু নাই। কাঁঠালতো সর্ব রোগের মহৌষধ। বাংলার ফল-ফুলই শুধু নয়। আউশ ধানের মার (গ্রামে ভাতের ফেন বলে) যে সুস্বাদু খেলে আর কিছু লাগে না। ব্রিটেন থেকে আসা আমার পরিচিত ভাই বলছেন ব্রিটেনে এক বাটি ভাতের স্যুপ বিক্রি হয় ১০ পাউন্ডে, বাংলাদেশী টাকায় প্রায় বারশত টাকা। বাংলার কোন কিছুই ফেলনা না। বাঙালি জাতি হিসেবেও ফেলনা না। বারবার বহি:শত্রু দ্বারা আমরা আক্রান্ত হয়েছি, অনেকে বলেছে এরা ফেলনা, এদের থেকে সব নিংড়ে নিতে হবে। কিন্তু বাংলার সম্পদ অফুরন্ত, শেষ হবার নয়, বাঙালি বীরের জাতি বারবার সব বাধা প্রতিহত করে প্রমাণ করেছে। সাধককুল বলে তোমরা পশ্চাদপদ নও, সত্যের সাথে যুক্ত হও। সত্য হতে সরে যেও না। বাংলাতো সাধককুলের আশীর্বাদধন্য। অসংখ্য সাধক শুয়ে আছেন এই মাটিতে। তোমরা আলোর সাথে যুক্ত হও। সেই আলো যদি হয় বিশাল বড় পাওয়ার হাউজ, তাহলে তো বাঙালি হবেই হবে আলোকিত। আবার ধারণ করার ক্ষমতা যদি না থাকে তো অবশ্যই বার্স্ট হয়ে যাবে। ধারণ করার জন্য ধীরে ধীরে তৈরি করা হয়। সময় ও কর্মের মধ্য দিয়ে তৈরি হয় বাঙালি, সে সাধকেরই আশীর্বাদ। আমরা চাই হক-হক হাক্কানী, তুমি কে, আমি কে বাঙালি-বাঙালি। আসুন সবাই মিলে আমরা বলি, জয় হোক হাক্কানীর, জয় হোক বাংলার, জয় হোক বাঙালিত্বের। জয় হোক, মুক্ত হোক আমার চেতনা। আমার চেতনায় আর ভাইরাস না থাকুক। আমার লক্ষ বছরের এই মেধা শূন্য থাকুক, যেমন ইচ্ছা, তেমন করে আমরা খেলবো, গড়বো সত্যমানুষের অনুস্মরণ করে। জয় হোক সত্যমানুষের।